Friday, July 4
Shadow

Tag: সামাজিক গল্প

জীবনের টানে লবণ জলে

জীবনের টানে লবণ জলে

সামাজিক গল্প
মোখলেছুর রহমান : আকাশের রং হলদেটে হয়ে উঠছে। এখনই সূর্য উঠবে। দূর দিগন্তময় বিস্তৃত ফসলের মাঠ। মৃদু বাতাস বয়ে চলেছে, যা মনের মধ্যে  প্রশান্তির এক উন্মাদনা সৃষ্টি করে তুলছে। কৃষকেরা মাঠে আসছে কাজের জন্য। কিন্তু তাদের মুখগুলো আর হাস্যোজ্জ্বল প্রাণবন্ত নেই। তারা যেনো তাদের সোনালী ফসলকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে আর ভালোবাসেন না। তাদের সমস্ত চিন্তা ধারা যেনো হঠাৎ বিচিত্র গোলক ধাঁধায় ঢুকেছে। তারা এই গোলক ধাঁধা থেকে মুক্তি চাই। নিম্ন মধ্যবিত্ত কৃষকের ইচ্ছা গুলি আজ উদ্দেশ্যবিহীন, লক্ষ্য অকেজো এবং অর্থহীন হয়ে গেছে। ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তার প্রভাব আমাদের মতো দেশের সাধারন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারকে অসহায়ত্ব বরণ করে নিতে বাধ্য করছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি কৃষি নির্ভর পরিবারের ভয়াবহ বাস্তবতার সামনে এনে দাঁড় করিয়েছে। তাদের উপার্জন দরকার, তাদেরক...
মা আসিয়া!

মা আসিয়া!

সামাজিক গল্প
রকিবুল ইসলাম ও মা! মাগো!ও মা আসিয়া!তাহলে এটাই ছিল তোমার মনে?ছেড়েই যদি যাবে বেলা শেষে,মিছিমিছি পাষাণ হৃদয়কেও কেন হার মানালে!কেন তোমার জন্য কাঁদবে গোটা জাতি?এরা তো বর্বর! এরা তো নরপশু,পাষণ্ড!আইয়ামে জাহেলিয়াত তুমি তো দেখনি, আমরাও দেখিনি।তবে, তোমার সাথে হলো যেটা, এদের কাছে,,,ওই বর্বর যুগও বোধকরি হার মেনেছে।তুমি তো মারা যাওনি মাগো!মওলার উদ্দেশ্যে তোমার এই স্বর্গীয় যাত্রা নাড়া চিরকাল দিয়ে যাবে,অক্ষিপুঞ্জ নি:সৃত নোনা জলের অঝোর ধারা কিছু মনুষত্বহীন সীমারের মরুময় বুকে উপহার দিয়ে গেলে।এই বিবেক বিসর্জিত জাতিকে চিরকাল অপরাধী তুমি করে গেলে।তোমার অতৃপ্ত আত্মার দোঁহায়!ক্ষমা করো না মা এদেরকে।এরা যেন এহেন পৈশাচিক সুখ নিয়ে সারাটি জীবন গুমড়ে কেঁদে মরে।ভয়াল সেই বিচারের দিন ঘনাবার পূর্বেই বার বার যেন দাহ হয় দোজখের অসহনীয় অনলে।ওদের আত্মা, ওদের বিবেক যেন ওদেরকে ক্ষমা না করে।ভালো থেকো মা চিরনিদ...
রমেশ ও দুর্গাপূজা

রমেশ ও দুর্গাপূজা

সামাজিক গল্প
ফারুক আহম্মেদ জীবন : ভারতের পশ্চিম কলকাতার বাসিন্দা কার্তিক। স্ত্রী সুবাসিনী, ছোট বোন পুষ্পরেণু, যাকে সংক্ষেপে সবাই পুষ্প বলে ডাকে। বিধবা মা, নির্ঝরীণি আর চার বছরের ছেলে রমেশকে নিয়ে কার্তিকের পাঁচ সদস্যের একটা সুখের সংসার।  দুর্গাপূজা প্রায় এসে গেছে। আর তাই ছোট্ট ছেলে রমেশ তার মা-বাবার কাছে বায়না ধরেছে এবার দূর্গা-পূজা সে বাংলাদেশে গিয়ে তার ঠাকু -মা আর ঠাকু-দার সাথে করবে। একটা কথা আগেই বলে রাখা ভালো। রমেশের বাবা কার্তিক ভারতের বাসিন্দা হলেও তার মা- সুবাসিনী রায় এর জন্মস্থান হলো বাংলাদেশের যশোর জেলায়। বাংলাদেশে রমেশ এর বাবা কার্তিকের বাবা-ঠাকু-দার সূত্র ধরে বহু আত্মীয় স্বজন রয়েছে। সেই সূত্র ধরে কয়েকবছর আগে কার্তিক পাঁচফুট ভিসা করে বেড়াতে গিয়ে ছিলো বাংলাদেশে আত্মীয়ের বাসায়। আর এসেই প্রথম দেখেই প্রেমে পড়ে গিয়েছিল কার্তিক রমেশের মা- সুবাসিনীর রায়ের।ঠিক কাঁচা হলুদের মতো য...

একজন মায়ের গল্প

সামাজিক গল্প
কবির কাঞ্চন: জীবনের ঘানি টানতে টানতে হাঁপিয়ে ওঠা মানুষদের অন্যতম বিল্লুরাণী। একমাত্র ছেলে দীলিপ যখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়তো তখনই তিনি স্বামীকে হারালেন। বিল্লুরাণীর স্বামী হরিপদ ছিলেন একজন প্রান্তিক জেলে। মহাজনের নৌকায় বছরব্যাপী কর্মচারী ছিলেন। সংসার খরচ মেটানোর জন্য আগে আগে মহাজনের কাছ থেকে দাদন নিতেন বলে অনেকটা গৃহপালিত কর্মচারীর মতো আচরণ করা হতো তার সাথে। সেবার একটানা আকাশের অবস্থা খারাপ ছিল। তারওপর হরিপদের শরীরের অবস্থাও ভালো ছিল না। সে নৌকায় না গিয়ে বাসায় ফিরে আসে। অসুস্থ শরীরে কাঁথা মুড়িয়ে শুয়ে থাকে।কিছুক্ষণের মধ্যে মহাজনের লোকজন এসে তাকে জোর করে কাজে নিয়ে যায়। যাবার বেলায় ছেলে দীলিপকে তিনি বলে গেলেন,  " ঠিকমতো লেখাপড়া করিস, বাবা। তোকে অনেক বড় হতে হবে। গরীবের লেখাপড়া ছাড়া আর কিছুই কাজে আসে না। আমি না থাকলেও লেখাপড়া সারাজীবন তোর পাশে থাকবে। তোকে পথ দেখাবে।"এরপর বিল...

জন্মভূমির মাটি

সামাজিক গল্প
ফারুক আহম্মেদ জীবন  পার্বত্য চট্টগ্রামের বাসিন্দা জহির রহমান আর মালতী বেগমের এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলের নাম জিতু। বছর সাতেক বয়স হবে তার। এবছর কেজি স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ছে জিতু। মেয়েটা ছোট নাম মিতু। চার বছর মতো বয়স মিতুর। প্রতিদিন সন্ধ্যার পরে রাতে জিতু কিছু সময় ওর মায়ের কাছে বই পড়তে বসে। মিতুও আদর্শলিপি বই থেকে বাংলা স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণ অ, আ, ক, খ অক্ষর গুলো পড়ে।এরপর পড়া শেষ হলে ওদের আব্বু জহির রহমান বাজার থেকে বাড়ি ফিরলে একসাথে সবাই মিলে রাতের খাবার খায়। আজ জিতুর পড়া শেষ হলেও তখনো ওদের আব্বু জহির রহমান বাড়ি ফেরেনি।মেয়ে মিতু বললো, আম্মু, আব্বু কখন বাড়ি আসবে? মা, মালতী বেগম বললো. এইতো এখুনি আসবে মা মিতু। জিতু বললো মা, আব্বু না আসা পর্যন্ত তাহলে একটু টিভি দেখি? মালতী বেগম বললো..আচ্ছা ঠিক আছে বাবা..। তারপর মালতী বেগম সময় কাটানোর জন্য রিমোটে চাপ দিয়ে টিভি-টা ওয়া...

যৌতুকের বলি

সামাজিক গল্প
ফারুক আহম্মেদ জীবন  রূপসী বাংলার যশোর জেলার ঝিকরগাছার এক  প্রত্যন্ত অঞ্চলের চির সবুজে ঘেরা গাঁ নারাংগালী। সে গাঁয়েরই এক বর্গাচাষী নাম ধনী। তারই উঠতি বয়সী বারো তেরো বছরের কৃষ্ণ বরণ কিশোরী এক মেয়ে চৈতী। যার দেহের রঙটা কালো। কিন্তু দেহের রঙ কালো হলে কি হবে। বেশ হৃষ্টপুষ্ট বেলুনে বলা দেহের গড়ন তার।  মুখশ্রীও বেশ গোলগাল আকর্ষণীয়। আর মুক্তার মত গালে ঝকঝকে সারি বাঁধানো দাঁত। হাস্যউজ্জ্বল,চঞ্চলা, দূরান্তমনার এক বালিকা। সারাদিন যার এ গাছে ও গাছে চড়ে বেড়ানো আর গায়ের সারা পাড়া ঘুরে দাপিয়ে বেড়ানো অভ্যাস। সে গুনগুন করে গান গাই। আর তিড়িংবিড়িং করে লাফিয়ে লাফিয়ে নেচে নেচে এ গাছের ফল ও গাছের ফল পেড়ে খায় আর মনের আনন্দে ঘুরে বেড়ায়। গাঁয়ে চলার মেঠো পথে যখন যার সাথে দেখা হয় সে হেসে বলে কি দাদু ভালো তো? কি দাদী ভালো আছ ? চাচা কেমন আছ? চাচী তোমার শরীর কেমন আছে? কিরে ছোট ? কিরে প...

বাল্যবিবাহ : সামাজিক গল্প

সামাজিক গল্প
ফারুক আহম্মেদ জীবন  তেরো- চৌদ্দ বছর বয়সের নবম শ্রেণীতে পড়ুয়া  কিশোরী মেয়ে পুষ্প। আজ স্কুল ছুটির পর মন খারাপ অবস্থায় আনমনা হয়ে স্কুল ব্যাগটি তার পিঠে ঝুলিয়ে রাস্তা ধরে একাকি স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছে। পিছন থেকে খুব দ্রুত পায়ে হাঁটছে আর একটু উচ্চস্বরে চিল্লাইয়ে পুষ্পর এক বান্ধবী  স্বর্ণ -লতা নামের একটি মেয়ে পুষ্পকে ডাকছে। এই পুষ্প. পুষ্প.. দাঁড়া শোন..। তবু পুষ্প শুনতে পাচ্ছে  না। আবারো ডাক দিলো স্বর্ণলতা.পুষ্প. এই পুষ্প দাঁড়া..দাঁড়া...এই, কি হলো পুষ্প.. শুনতে পাচ্ছিস না? আমি তোকে ডাকছি...এই পুষ্প একটু দাঁড়া.। এবার স্বর্ণলতার ডাক পুষ্পর কর্ণগোচর হতেই সে তার হাঁটার গতি কিছুটা শিথিল করলো।স্বর্ণলতা পিছন থেকে হাঁফাতে হাঁফাতে পুষ্পর কাছে পৌঁছে হাসফাস হাসফাস করতে করতে বললো, বাব্বাহ! সেই কখন থেকে আমি তোকে ডাকছি।তোর মন কোথায় ছিলো শুনি? যে, তুই শুনতে পাচ্ছিস না? পুষ...

তিনটি অণুগল্প

সামাজিক গল্প
সাব্বির হোসেন নাফিজ খাদকহাসপাতালের মসজিদে সারা রাত কাটিয়েছে আবুল। শরীর দুর্বল। গতরাতে আবুলের ছেলেকে একদল লোক বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। ঘন্টা খানেক বাদে থানা থেকে ফোন দিয়ে হাসপাতালের মর্গে আসতে বলে। আবুল মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে। কিচ্ছুক্ষণ পরপর বলে ওঠে, আমার বাজান, আমার মানিক। পান চিবাইতে চিবাইতে মর্গের কেয়ার টেকার বলল, পোলারে নিয়া যাইবেন নাকি মুখ দেখবেন? - পোলাটারে তো লইয়াই যামু। কেন? যদি লাশ লইয়া যান তাহলে দু হাজার, মুখ দেখানি একশ আর কই কই চোট খাইছে তাহলে পঞ্চাশ টাকা দেওন চাই। - পকেটে দুইশত টাকাই আছে। বাবা, আমার এক মাত্র বাজানটারে আমার হতে দিয়া দাও। আমি বাজানরে লইয়া বহুদূর চইলা যামু। গল্প- উন্মেষ আকাশে চাইয়া কি যেন দ্যাখে লাইজু। চারিদিকে পানি। সরকারে যে বান্ধ দিছিল তা ভাইঙ্গা গ্রাম ডুইবা গ্যাছে। দুইবছরের পোলা কাদেররে কোলে নিয়া উঁচা জায়গা দেইখা মশারি ...

বাবা বটের ছায়া

সামাজিক গল্প
ফারুক আহম্মেদ জীবন  শাওন আর শায়লার কোন ছেলে নেই। দুটো মেয়ে নাম চন্দ্রা আর তন্দ্রা। বড় মেয়ে চন্দ্রার বয়স খুব বেশি হলে আট বছর হবে। এবছর তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ছে চন্দ্রা। আর ছোট মেয়ে তন্দ্রার বয়স পাঁচ ছয় বছর মতো। কয়েক মাস হচ্ছে তন্দ্রা স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে। ওদের বাবা শাওন আদর করে দুই মেয়েকে ডাকে চন্দ্রা মণি আর তন্দ্রা মণি মা বলে।  আর ডাকবেই বা- কেনো? ওরা দু,বোন চন্দ্রা আর  তন্দ্রাই যে ওদের মা-বাবার প্রাণ। কলিজার বুটা, দুটি চোখের মণি। বলতে গেলে মেয়ে দুটোর জন্যই শাওন আর শায়লার পৃথিবীতে বেঁচে থাকা। ওরা দু,বোনই যেনো ওদের বাবা-মার পৃথিবী। কখনো মেয়ে দুটোকে ওরা চোখের আড়াল হতে দেয়না। বটবৃক্ষের ছায়ার মতো আদর, স্নেহ, আর ভালোবাসার সুশীতল মায়ার চাদরে আগলে রাখে মেয়ে দুটোকে। প্রতিদিন সকালে শায়লা ঘুম থেকে উঠে ওয়াশ রুমে গিয়ে দাঁত মেজে ফ্রেস হয়ে ওজু করে এসে ফজরের ন...