Saturday, July 5
Shadow

Tag: ধ্রুব নীল

বনরুটির মা

কিশোর গল্প, জাদু-বাস্তবতা
ধ্রুব নীলের গল্প একটা ছিল ছোট বনরুটি। সবে মাত্র দোকানে এসেছে। এক রাতে আকাশে তাকিয়ে দেখে কত্ত বড় একটা বনরুটি। কিন্তু সেই বনরুটির মুখ গোমড়া। ওটা কি আমার মা? আমি নেই বলে মায়ের মন খারাপ? বনরুটি ঠিক করল, মায়ের কাছে যাবে। সুযোগ পেয়ে একদিন বনরুটি দিল লাফ। দোকান থেকে বের হয়ে গড়িয়ে চলল। গড়াতে গড়াতে শহরের রাস্তায় এসে পড়ল। আরে রাস্তায় এত বনরুটি! ঘর ঘর শব্দ করে সাঁই সাঁই করে ছুটছে ওরা। সেগুলোর ওপর আবার মানুষ বসেও থাকে। ছোট্ট বনরুটি গড়াতে গড়াতে গেল এক গ্রামে। সেখানে একটা গোলগাল জিনিস। পানিতে চুপচাপ বসে আছে। ‘ও ভাই, তুমি কি পানিরুটি?’ গোলগাল জিনিসটা বলল, ‘আমি রুটি না। পদ্মফুলের পাতা।’ রুটি গড়াতে গড়াতে গেল আরেক গ্রামে। এ পথে যায় ও পথে যায়। সামনে দেখে গোলগাল কী যেন একটা। রুটি ভাবলো, এ আবার কোন রুটি? সামনে সরু মাঝে গোল। পেছনে একটা লেজও আছে। ছোট্ট রুটিকে দেখে ফ...

বোধ

জাদু-বাস্তবতা, রোমান্টিক ছোটগল্প
গত ছমাস ক্ষণিকা হাসপাতালে। কোনো কাজ নেই। দিনরাত শুধু শুয়ে থাকা। প্রথম কদিন বেশ খারাপ লেগেছিল। পরে সয়ে এসেছে। বিছানায় শুয়ে চোখ বুঁজে ভাবাটাই এখন তার কাজ। মাঝে মাঝে বদ্ধ পরিবেশটায় সবকিছু অসহনীয় মনে হয়। কিন্তু চোখ বুঁজলেই মনে হয় সামনে অসীম দিগন্ত। হাসপাতালে ছমাস। অথচ ক্ষণিকার স্বামী তাকে একবারও দেখতে আসেনি। ইশ্, অন্তুটা না জানি কী করছে! সামনের ডিসেম্বরে তিনে পা দেবে। এই সেদিন টুকটুক করে কথা বলা শিখেছে। বদ্ধ পরিবেশটায় থাকলে সময় বোধহয় দ্রুতই যায়। ইমতিয়াজ কি অন্তুকে ঠিকমতো সময় দিচ্ছে? সে নিজেই তো ভুলোমনা। ক্ষণিকা এ জন্য তাকে একটা নামও দিয়েছে, ‘ভুলু’। সন্তান ও স্বামীর কথা অনেক ভেবেছে ক্ষণিকা। প্রথম দিকে খুব অভিমান জন্মালেও এখন আর তা নেই। চোখ বন্ধ করে চাইলেই সে এখন অন্তুকে আদর করতে পারে। কেবল ঠিকমতো কথা বলতে পারে না। কিছু বলতে গেলেই গা ঝাঁকিয়ে দৌড়ে পালাবে। আপাতত ভাবার মতো...
হরর গল্প: নিস্তার

হরর গল্প: নিস্তার

অতিপ্রাকৃত গল্প, হরর গল্প
লেখক: ধ্রুব নীল ঝড়ের ঝাপটায় তোশক চুপসে গেছে। রাজ্জাক জানালা বন্ধ করছে না। তার মনেও ঝড়। বাইরের ঝড়ের সঙ্গে মনের ঝড়ের কাটাকুটি খেলা হচ্ছে।দুই বছর নীলিমার প্রেমে হাবুডুবু খেয়েছে রাজ্জাক। এখনো চিঠিটা দেওয়া হয়নি। দিলেই তুলকালাম বেঁধে যাবে। কলেজের বণিক স্যারের মেয়ের সঙ্গে প্রেম বাড়িতে মেনে নেবে না। রাজ্জাকের বাবা রাধানগর মসজিদ কমিটিতে আছেন। ঘটনা ঘটলে ইজ্জতের বেড়াছেড়া লেগে যাবে। https://youtu.be/M2Z9TIitXb0 নীলিমা বললে রাজ্জাক এক শার্টে ঘরবাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়বে। সমস্যা হলো নীলিমা সেটা বলবে না। সে রাজ্জাককে বিশেষ পাত্তা দেয় না। রাজ্জাক প্রতিদিনই হ্যাংলার মতো গার্লস কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। তবে কাল থেকে দাঁড়াদাড়ি বন্ধ। কাল নীলিমার বিয়ে।বাইরে যে ঝড় হচ্ছে তাতে বিয়ের গেট লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়ার কথা। এমনটা ভেবেও রাজ্জাকের খুশি লাগছে না। একটু পর পর সিগারেট হাতে জানালার কাছে খাটে পা দুলিয়ে বসছে। ...
হরর ভৌতিক গল্প: রাজেন্দ্র সরকারের অপমৃত্যু

হরর ভৌতিক গল্প: রাজেন্দ্র সরকারের অপমৃত্যু

হরর গল্প
লেখক: ধ্রুব নীল ‘আজ রাত বারোটায় আত্মহত্যা করবো। মর্ত্যলোক ত্যাগের চূড়ান্ত ক্ষণের খুব বেশি বাকি নেই।’ ‘জি জ্যাঠামশাই।’ ‘ভাদুড়িকে সব বলা আছে। চব্বিশে আষাঢ়। সব ঠিকঠাক! সব! গাড়ি নিয়ে আসবে পৌনে একটায়। আমার ডেডবডি কফিনে ঢোকানোর দায়িত্ব তোমার। পরে যা করার ভাদুড়ি করবে। পারবে তো?’ ‘জি জ্যাঠামশাই।’ ‘বৈদ্যকে বলবে হাত লাগাতে। কফিন আটকে ভালোমতো লক করবে। ঝড়ও আসবে। ইলেকট্রিসিটি থাকবে না। যাও এখন বিদেয় হও।’ বয়স সত্তর ছুঁলেও মুগুরভাজা শরীর রাজেন্দ্র সরকারের। যমের মতো ডরায় বিজন। মা-বাপ হারা ছেলেটাকে কোলেপিঠে নয়, কেলিয়ে-পিটিয়ে বড় করেছেন। জাঁদরেল স্বভাবের কারণে নিজের সংসার হয়ে ওঠেনি। আবার বাইশ বছরের ভাইপোকে একটিবারের জন্য নিজের সন্তানও ভাবতে পারেননি। বিজনের সঙ্গে রাজেন্দ্র সরকারের সম্পর্কটা তাই প্রভু-ভৃত্যের মাঝামাঝি এক আলো-আঁধারিতে দোদুল্যমান। রাজেন্দ্র সরকারের কণ্ঠের স...
কুসুমপুরে সিন্ডারেলা

কুসুমপুরে সিন্ডারেলা

কিশোর গল্প
খাওয়া শেষে ভাবতে বসল দু’জন। রিন্টু গভীর মনযোগ দিয়ে ভাবছে। সিন্ডারেলা একটু পরপর ফুঁপিয়ে উঠছে। রূপকথার দেশে ফেরার কোনো উপায় জানা নেই তার।‘পাইছি! কিউরেকা! না না ইউরেকা!’তড়াক করে লাফিয়ে উঠলো রিন্টু। সিন্ডারেলার চোখও খুশিতে চকচক করে উঠলো। ‘শোনো, রূপকথার গল্প তো আমাদের লেখকরা লেখে। তাদের কাছে গেলেই তো হয়! তারা তোমাকে নিয়ে একটা গল্প লিখলেই তো তুমি ফিরে যাবে!’ সিন্ডারেলা আরেকটু হলে খুশিতে কেঁদেই ফেলত।‘ইশশ.. দারুণ বুদ্ধি তোমার। থ্যাংক ইউ। কিন্তু..। কিন্তু লেখক পাবে কোথায়?’‘চিন্তা নাই! আমাদের সাজু ভাই আছে। কবিতা টবিতা লেখে। উনি গল্প লিখতে পারে। আমাদেরকে অনেক অনেক গল্প শোনায়। এক কাজ কর, তোমাকে দেখলে গ্রামের লোকজন ভিড় করতে পারে। তুমি বাড়ি চলে যাও, আমি সাজু ভাইকে খুঁজি।’সন্ধ্যে হয়ে গেছে। রিন্টুর মা সিন্ডারেলাকে ভাপা পিঠা খেতে দিয়েছেন। সম্ভবত বিদেশি রূপকথার গল্পে এ পিঠার কথা কেউ লেখেনি। আর এ জন্য...

ঝড়, একটি মেয়ে ও বিরিন্তা ফুল

কিশোর গল্প
বদরাগী হেডমাস্টারের মতো প্রচণ্ড ঝড়টা একটু পরই তেড়ে আসবে। মেঠো পথটার ওপর পড়ে থাকা পাতলা পলিথিন আর কাগজের ঠোঙাগুলো দুষ্টু ছাত্রদের মতো পড়িমড়ি করে পালাচ্ছে। কেউ কেউ আবার আকাশে উড়ে চলে গেল। দিন দুপুরের আকাশ কাঁপিয়ে কালবৈশাখির কাজল কালো মেঘ। জানালা দিয়ে অনেক্ষণ ধরে বাতাসের নাচন দেখছে অন্তু। গ্রামের লোকজন এদিক সেদিক ছুটে চলে গেছে অনেক আগেই। লিকলিকে এক চাষীর গামছাটা সাপের ফণার মতো লকলক করছে বাতাসে। ধুলাউড়ি নামের গ্রামটায় আজ সত্যি সত্যি ভীষণ ধুলো উড়ছে।ঝড়টা একেবারেই আলাদা। এত বাতাস আর কালো মেঘ আগে দেখেনি। মুখে হঠাৎ হঠাৎ ঠাণ্ডা বাতাসের ঝাপটা লাগছে। গায়ে জ্যাকেট থাকার পরও শীতে কেঁপে কেঁপে উঠছে আট বছরের অন্তু।চোখের সামনে মড়মড় করে আম গাছের ডাল ভাঙলো। উড়ে গিয়ে সোজা পড়লো মেঠো রাস্তার পাশে ডোবার মতো দেখতে ঝোপঝাড়ে ভরা পুকুরটার গায়ে। তির তির করে কাঁপতে থাকা কচুরিপানার ফুলগুলো হুড়মুড় করে জায়গা করে দিল ডালটাক...

অন্তু ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড

কিশোর গল্প
‘মিস্টার খরগোশ আমি আবারো বলছি ও অ্যালিস নয়!’ ‘ইয়ে স্যার, তা ঠিক। কিন্তু..।’ ‘কিসের কিন্তু! ও একটা ছেলে আর অ্যালিস একটা মেয়ে! আর অ্যালিসের বাড়ি ইংল্যান্ডে। এর বাড়ি কোথায় কে জানে!’ ‘স্যার.. ওর বাড়ি বাংলাদেশে। আনন্দপুর গ্রামে থাকে।’ ‘তো একে এখানে এনেছো কেন! হোয়াই! ইউ ইডিয়ট! আর শোনো স্যার বলবে না, রাজামশাই বলবে।’ ‘স্যার, এটা একটা দীর্ঘ কাহিনী। দীর্ঘ করে বলবো, নাকি সংক্ষেপে?’ ‘সংক্ষেপে বল হাঁদারাম!’ হাল্কা কাশি দেওয়ার চেষ্টা করলেন উইলিয়াম খরগোশ। কিন্তু পারলেন না। গলা দিয়ে ভোঁতা একটা শব্দ বের হলো। হড়বড় করে দাড়ি কমা বাদ দিয়ে বলতে শুরু করলেন। ‘স্যার আমি ইংল্যান্ডে গিয়েছিলাম কিন্তু অ্যালিসকে অনেক খুঁজেও তার বাড়িতে পাইনি, পরে একটা ম্যাগাজিনের মধ্যে দেখি অ্যালিস এখন অনেক বড় নায়িকা হয়ে গেছে, হলিউডে অভিনয় করে, জনি ডেপের সঙ্গেও নাকি তার একটা সিনেমা...। ‘আমি ...

আজব দেশের ধাঁধার গল্প

কিশোর গল্প
‘ও কি জ্ঞান হারিয়েছে?’‘আরে নাহ, জ্ঞান হারানোর ভাণ করে পড়ে পড়ে ঘুমুচ্ছে। দেখছো না মুখটা কেমন হা করে রেখেছে।’যাকে উদ্দেশ্য করে বলা হল, সে কিন্তু কথাগুলো ঠিকই শুনেছে। কিন্তু চোখ মেলার সাহস হল না তার। কেননা কথাগুলো কোনো মানুষের গলা দিয়ে বের হয়নি। বলছে দুটো পাখি। চোখের ফাঁক দিয়ে ওদের খানিকটা দেখে নিল অন্তু। দেখতে বড় সাইজের তোতার মতো। কিন্তু এতবড় তোতা সে আগে দেখেনি। কমসে কম আড়াই ফুট লম্বা। নীল লেজ, গায়ে হলুদ ছোপ আর গলার দিকটা লাল। পায়ের দিকে তাকাল। নাহ, ধারাল নখ নেই। নির্ভয়ে চোখ খোলা যায়।‘তোমরা কি ব্যাঙ্গমা ব্যাঙ্গমি?’অন্তুর কথা শুনে দুটো পাখিই চুপ। একজন আরেকজনের দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকাল। উত্তর দিল মেয়ে পাখিটা।‘এমন নাম তো আমরা উইকিপিডিয়াতেও শুনিনি, তা ওই ব্যাঙ্গমা ব্যাঙ্গমির বৈজ্ঞানিক নামটা বলতে পারলে হয়ত চিনতে পারি।’অন্তু বুঝতে পারল বোকামি হয়ে গেছে। উঠে বসার চেষ্টা করল। মাথায় খুব আঘাত পেয়...

রোবটপাড়ায় সঙ্কট

রম্য রচনা
লেখক: ধ্রুব নীল ধরন: রম্য রচনা প্রসঙ্গ: পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজে মানুষের কাটা মাথা লাগবে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রচারণাকে কুচক্রী মহলের গুজব বলে জানিয়েছে সেতু প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। খবরের লিংক ‘বাবা হাজারখানেক চার্জ দাও। দোকানে যাব। একটা সুপারকনডাকটর খাওয়া লাগবে। একটা অ্যাটমিক অ্যাপ বানাচ্ছি তো।’‘পপ-২৪৬! এসব করতে মানা করেছি না! উল্টোপাল্টা খেলে পরে তোর হার্ডডিস্কে ব্যথা করবে!’‘একটা সুপার খেলে কিছু হবে না বাবা!’‘আহা! আমাদের সময় চল্লিশ মিলিঅ্যাম্পিয়ার চার্জে কী সুন্দর আইসি পাওয়া যেত! এখনকার এসব সুপারকনডাকটরে..।’‘কথায় কথায় ছেলেকে তোমাদের সময়ের গল্প শোনাবে না! বরং ওকে সাবধানে থাকতে বলো। রোবটধরা বের হয়েছে।’গিন্নির কথায় এ কালে ফিরে এলেন বজ-৪৫ মডেলের বাবা রোবট।‘অ্যাঁ! পপকে ধরবে কেন? কে ধরবে! কেন ধরবে!’‘খবর কিছু রাখো! আন্তঃগ্যালাক্টিক স্পেস-টাইম সেতু তৈরি হচ্ছে আমাদের রোবটপ...
সাইকেলটা প্রতিদিন স্কুলে আসে

সাইকেলটা প্রতিদিন স্কুলে আসে

কিশোর গল্প, সায়েন্স ফিকশন
ধ্রুব নীলের কিশোর সায়েন্স ফিকশন গল্প : স্কুলের উত্তরে পরিত্যক্ত একটা ক্লাসরুম। তার পেছনে জলাভূমি। সেখানে ধান চাষ হয়। মাঝে মাঝে বক-মাছরাঙা দেখা যায়। ভবনের ওই কোণাতেই দেয়ালে ঠেস দিয়ে পড়ে থাকে সাইকেলটা। পড়েই থাকে। ওতে চড়ে কে আসে, কেনই বা সেখানে পড়ে থাকে সাইকেলটা, কে জানে! কেউ জানার চেষ্টাও করেনি কোনোদিন। ক্লাস টেনের পপেল ছাড়া।পপেল তার বন্ধু রানাকে বলেছে বিষয়টা। পাত্তাই দিল না।‘পুরানা ফোনিক্স সাইকেল। এ আর এমন কী। এমনি পড়ে আছে।’‘এখানে প্রতিদিন কে রেখে যায়?’‘কেউ রাখে না। আগে থেকেই ছিল বোধহয়।’‘মাঝে মাঝে তো দেখা যায় না।’‘তখন মনে হয় স্কুল বন্ধ থাকে।’রানার বোকামি টাইপ কথা শুনে বিরক্ত হয় পপেল। বলে ‘সাইকেল যদি এমনি এমনি আসে, তার সঙ্গে স্কুল খোলা-বন্ধের কী সম্পর্ক!’‘ও। তা হলে কেউ নিয়ে যায়, আবার রেখে যায়। আমি গেলাম। টিফিন টাইম শেষ হয়ে যাবে। পরে খিদে পেলে ফোনের অ্যাপগুলোকেই খেয়ে ফেলতে পারি।’পপেলের ভাবনা ...