Friday, July 4
Shadow

Tag: ধ্রুব নীল

সায়েন্স ফিকশন গল্প : বিরিন্তা

সায়েন্স ফিকশন গল্প : বিরিন্তা

সায়েন্স ফিকশন
ধ্রুব নীলের সায়েন্স ফিকশন গল্প -- বাংলা সন ১৪০১। পাঁচই ফাল্গুন। তৈয়ব আখন্দ বিব্রতকর অবস্থায় উঠোনে বসে আছে। হুরাসাগর নদীতে কী করে মরতে মরতে দশ কেজি সাইজের বোয়াল মাছ ধরেছে সেই গল্প শুনছিল হারু মাঝির কাছ থেকে। মাঝি চলে গেল। রেখে গেল নিরবতা। তৈয়ব গেল মেয়ের পড়ার টেবিলের দিকে। পুরো বাড়িতে বাপ-মেয়ে ছাড়া আর কেউ নেই। মেয়েটাও শব্দ করে পড়ে না। সন্ধ্যা হতেই ঝপ করে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের নীরবতা নেমে আসে শোলাকুড়ি গ্রামের পুরনো বনেদি ধাঁচের টিনশেডের বাড়িটায়। বাড়িটা তৈয়বের নয়। বাড়ির মালিক তার স্ত্রী আফরিন নাহার। ঝগড়া যতবার হতো, সে-ই চলে যেত রাগ করে। পাশের নরিল্লা গ্রামে বড় ভাইয়ের বাড়িতে গিয়ে উঠত। ‘বিচিত্র ব্যাপার। তোর মা আমাকে বের করে দিলেই পারে। দুনিয়ার সব অঙ্ক ডাইলভাত, সংসারের অঙ্ক মিলাইতে গেলে চক্কর লাগে। এখন তারে আবার তার বাড়িতে ডাইকা আনা লাগবে।’ ‘বাবা, মিষ্টি কুমড়া...
লাল ফুল

লাল ফুল

কিশোর গল্প, জাদু-বাস্তবতা
ধ্রুব নীল : সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে এক এক করে বত্রিশ পর্যন্ত গুনে ফেলেছে অন্তু। তবু ঘুম আসার জো নেই। মাকড়সার ঝুলের ভেতর একটা নীল পোকা আটকে আছে। ওটার দিকে তাকিয়ে থাকলেও অন্তু ভাবছে অন্য কিছু। মনে মনে নিজের বয়স হিসেব করলো একবার। তিন হাজার চুয়ান্ন থেকে বাষট্টি সাল। কতো হলো? সাত নাকি আট পেরুলো? মনে মনে ধরে নিল এখন তার বয়স আট। তারমানে এখন তার একটা গোপন কুঠুরী থাকতে পারে। যেমনটা ছিল তার দাদার। দাদার কথা মনে পড়তেই আবার চিন্তা ঘিরে ধরলো অন্তুকে। দাদা মারা গেছেন পাঁচ দিন হলো। কিন্তু অন্তু দাদাকে কখনই ভুলতে পারবে না। দাদা তাকে বিশাল এক দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। একটা বাক্স পাহারা দেয়ার দায়িত্ব। ওটা আছে ঘরের পেছনের একটা কড়ই গাছের গোড়ায়। মাটির তলায়। ওটাই এখন অন্তুর গোপন কুঠুরী। তাই অন্য সবার মতো ঘুমানোর আগে শেষবারের মতো গোপন কুঠুরীর সব ঠিকঠাক আছে কিনা তা দেখে আসার তাগিদ অনুভব করলো অন্তু। ...
পিবিজ্ঞানী পিপি

পিবিজ্ঞানী পিপি

কিশোর গল্প
ধ্রুব নীল : মানুষ যেমন নাছোড়বান্দা হয়, পিপি তেমনি নাছোড়পিপড়া। কিছুই ছাড়বে না সে। হাতের কাছে যা পাবে, তা’ই ধরে দেখবে। যদি নতুন একটা কিছু বানানো যায়! গতবছর এভাবে একটা মাটি খোঁড়ার বেলচা আর মোটর জুড়ে দিয়ে বানিয়ে ফেলেছিল আজব এক যন্ত্র। সবাই দারুণ প্রশংসা করেছিল পিপির। যন্ত্রটা দিয়ে এক সেকেন্ডের মধ্যে মাটি খুড়ে ভেতরে ঢুকে যাওয়া যায়। মানুষের পায়ের চাপ থেকে বাঁচার জন্য যন্ত্রটার জুড়ি নেই। যন্ত্রটার জন্য পিপি বছরের সেরা পিবিজ্ঞান পুরস্কার পেয়েছিল। মহল্লার রানী পিঁপড়া তাকে নিজ হাতে চিনির দানা খাইয়ে দিয়েছিলেন। আহা! সেই স্বাদ এখনো ভুলতে পারছে না পিপি। কিন্তু কী করবে, এ বছরে একটা নতুন আবিষ্কারও করতে পারেনি বেচারি। বসে বসে কেবল ভেবেছে আর ভেবেছে। তবে আজকে একেবারে মাথার দুটো শুঁড় বেঁধে নেমে পড়েছে পিপি। নতুন কিছু আবিষ্কার করেই ছাড়বে।সকাল থেকে পিপিকে খুঁজে পাচ্ছে না তার মা চি বেগম। মেয়েটা অল্পবয়সেই ...
অঙ্কপুরের গল্প

অঙ্কপুরের গল্প

কিশোর গল্প
ধ্রুব নীল : মগডালে দুটো পা পেঁচিয়ে উল্টো হয়ে ঝুলে আছে ছোট্টা খোকা শূন্য। তার মারাত্মক মন খারাপ। আজকের ঝগড়াটা একটু একতরফা হয়ে গেছে। এক আর দুইয়ের সঙ্গে আজ একটুও পেরে ওঠেনি সে। দেখতে ছোট বলে এভাবে সবার সামনে অপমান করতে হবে? এক বলে কিনা, ‘তোর তো কোনো মান নেই, একেবারে অর্থহীন। তোর নামের মানে বুঝিস? এক্কেবারে ফাঁকা। ফাঁকা মানে ফক্কা, ফক্কা মানে জিরো, জিরো মানে শূন্য।’ তার সঙ্গে তাল মিলিয়েছে হতচ্ছাড়ি দুই। বেণী দুলিয়ে বলে, ‘তুই যে কেন আছিস তা তুই নিজেও জানিস না। এই আমাকেই দেখ না! সবচে ছোট মৌলিক সংখ্যা আমি, সবাই আদর করে। তুই তো অংকই না।’ মন খারাপ হলেই শূন্য গাছের ডালে পা আটকে উল্টো হয়ে ঝুলে থাকে। একদম স্থির। কেউ বুঝতেই পারে না। আজও তাই ঝুলে আছে। ঝুলতে ঝুলতে শূন্য ভাবছে তার শৈশবের কথা। তাকে অংকপুরে এনে দিয়েছিল আর্যভট্ট নামের এক ভারতীয় গণিতবিদ। তারপর গোটা বিশ্বে সেকি হই চই। তার কারণ...

লেখক মোতাব্বির বনাম অন্তু

কিশোর গল্প
ধ্রুব নীল : ‘ছেলেটার নাম অন্তু। বয়স তের কি চৌদ্দ। কিন্তু ভাব দেখে মনে হবে তেইশ চব্বিশ। এক নামে সবাই চেনে। বখাটে বলেও ডাকে কেউ কেউ। লম্বা একটা লাল শার্ট পরে ঘুরে বেড়ায়। লম্বা শার্টের সঙ্গে মাঝে মাঝে হাফ প্যান্ট পরে। চুল এলোমেলো। সম্ভবত তার মা-বাবা কেউ নেই। আমি তাকে প্রতিদিন দেখি। বিকেলে মাঠের এককোণে একদল টোকাইয়ের সঙ্গে বসে বসে বাদাম খায় সে। গ্রামে এমন কেউ নেই, যাকে সে জ্বালিয়ে মারেনি। তবে তার চোখেমুখে সবসময় একটা কিং.. কিং.. কিং..।’ -       কী লিখসেন এইডা? ওই মিয়া কী লিখসেন এইহানে। -       কিংকর্তব্যবিমূড় হবে ওটা। হেহেহে। মানে কী করবে তা ভেবে না পাওয়াকে বলে কিং..। -       হেইডা কী, খায় না মাতায় পিন্দে। আপনে তো আসলেই একটা কিলিকবাজ। -       কী বাজ? ...
রহস্যজট : ইলশেগুড়ি

রহস্যজট : ইলশেগুড়ি

থ্রিলার গল্প
ধ্রুব নীল: শুভ চলে যেতেই কফির মগ হাতে উঠোনের মতো জায়গাটায় রাখা দোলনায় গিয়ে বসলো ইরিনা। ঢাকায় এমন আঙিনাওয়ালা বাড়ি হাতে গোনা। চারপাশে অ্যাপার্টমেন্টের ছড়াছড়ি। পুরনো আমলের বাড়িটাও যে কবে বাড়িওয়ালা বিল্ডার্সদের দিয়ে দেয়। আকাশে এখনও মেঘ। রাতে বান্ধবীরা আসবে সবাই। তার স্বামী গেছে চট্টগ্রামে, ব্যবসার কাজে। আগামীকাল ফেরার কথা। বান্ধবীরাও সবাই কোনও না কোনও চাকরিতে। বৃষ্টি দেখে আজ সবাই ইরিনার হাতের খিচুড়ি খেতে চেয়েছে। পাশাপাশি তিন চার পদ রান্না করবে বলেও ঠিক করলো। তুলির পছন্দ পটলের দোলমা আর ফৌজিয়ার চাই বিফ চিলি। নাজলা আবার ইদানীং মাংস খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। তার জন্য সবজি।রান্না চড়িয়ে আবার উঠোনে এলো ইরিনা। বাড়িটা একেবারে নীরব। দোতলায় ভাড়াটিয়া থাকে। আজ সম্ভবত নেই। উঠোনে রাখা দোলনায় দুলতে দুলতে ইরিনা ফোন দিল নাজলাকে। খানিক খোঁজখবর নিয়েই বুঝতে পারলো মেয়েটা কোনও একটা ঝামেলায় আছে। ঠিকঠাক কথা বলতে পারছ...
রহস্যজট : বর্ষামঙ্গল

রহস্যজট : বর্ষামঙ্গল

থ্রিলার গল্প
ধ্রুব নীল : ‘নিন, মাথাটা মুছুন।’ইরিনা টাওয়াল বাড়িয়ে দিলেও ছেলেটা যেন ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না সে এটা দিয়ে কী করবে। পরে যখন বুঝতে পারলো তখন এমনভাবে মাথা মুছতে লাগলো যেন মাথায় বৃষ্টির পানি নয়, বিষাক্ত কিছু লেগে আছে। তারপর মাথা মোছা যখন থামলো, তখন সে অনেকটা স্বাভাবিক হলো। বিড় বিড় করে বললো, ‘আমার বাবার ফাাঁসি হয়ে যাবে।’ ‘কফি নাকি চা?’‘জ্বি কফি।’ইরিনা কফি বানাতে চলে গেল। ভাল পর্যবেক্ষক হলে বুঝে ফেলবে এটা তার ইচ্ছাকৃত। বেশিরভাগ ক্লায়েন্টই এমন। হন্তদন্ত হয়ে আসে। কথা গুছিয়ে বলতে পারে না। প্রাইভেট কাউন্সেলর হিসেবে খ্যাতি ছড়িয়ে যাওয়ায় ইরিনাকে এমন ক্লায়েন্ট কম সামলাতে হয়নি। এসব টুকটাক কৌশল তাই রপ্ত করতেই হলো তাকে।‘এবার গোড়া থেকে বলুন।’‘সেদিন সকাল থেকে বৃষ্টি। বাবা মা প্রতিদিনই ঝগড়া করে। মানে আমার সৎমা। কলেজ থেকে ফিরে দেখি ওইদিনও ঝগড়া করছে দুজন।’কফিতে চুমুক।‘কী নাম আপনার?’‘শুভ।’‘কী নিয়ে ঝগড়া হতো ...
হরর থ্রিলার গল্প : সি আই পি এ

হরর থ্রিলার গল্প : সি আই পি এ

অতিপ্রাকৃত গল্প, থ্রিলার গল্প, হরর গল্প
ধ্রুব নীলের হরর থ্রিলার গল্প : সি আই পি এ রেনু খুন হওয়ার দেড় মাসের মাথায় খুনিকে ধরেছে রশিদ। খুনি এখন তার সামনে ভারী কাঠের চেয়ারে হাত-পা বাঁধা বন্দি। ‘তুমি আমার একচল্লিশ নম্বর সাবজেক্টের... স্বামী। চিনতে পেরেছি আগেই।’ খুনি বলল। রশিদের স্ত্রী রেনুকে ভয়াবহ যন্ত্রণা দিয়ে সে-ই মেরেছে। ফ্ল্যাট বাসার ভেতরের একটা রুম। ভেতরে ঝলমলে আলো। দুই লেয়ারের ভারী পর্দায় ঢাকা চারপাশ। রুমটা সাউন্ডপ্রুফ করতেই লাখ তিনেক খরচ করেছে রশিদ। অ্যাকুস্টিক প্লাস্টারবোর্ডের সঙ্গে ফোমও বসিয়েছে। তবে খুনি লোকটা একবারও চেঁচামেচি করেনি। খুনির নাম জানা নেই। নাম নিয়ে রশিদের আগ্রহ নেই। পত্রিকার দেওয়া নামটা হলো ‘সলটেড কিলার’। ভিকটিমকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে রক্তাক্ত করতো। তারপর লবণ বা এ জাতীয় কিছু মেখে দিত। মরার আগ পর্যন্ত চলতো অমানুষিক নির্যাতন। দুয়েকটা ডেডবডিতে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ও ভিনেগারের ট্রেস পা...
ছোটদের গল্প : পিপির প্ল্যান

ছোটদের গল্প : পিপির প্ল্যান

কিশোর গল্প
পিপির মন খারাপ। মা আজও বকেছে। সে নাকি বসে বসে শুধু চিনি খায় আর ঘুমায়। কিন্তু সে যে মস্ত বড় বিজ্ঞানী এটা কারো মাথাতেই ঢোকে না। সে-ই প্রথম প্রমাণ করলো, শুধু মরার সময়ই পিঁপড়ার পাখা গজায় না, এর আগেই চাইলে পিপড়ারা পাখা লাগিয়ে উড়তে পারে। ইলেকট্রনিক পাখা বানানোর জন্য গত বছর সেরা পিবিজ্ঞানীর পুরস্কার পেয়েছিল সে। আর বিজ্ঞানীরা তো একটু বেশি ঘুমাবেই। টিটিনপুর পাশেই আছে ইয়া বড় এক দালান। সেখানে আবার রেড ইন্ডিয়ান পিপড়াদের কলোনি। অবশ্য এখন পর্যন্ত মিলেমিশে আছে সবাই। লাল পিঁপড়ের দল খাবার খোঁজার সময় ঘাড় উঁচিয়ে টিটিনপুরের দিকে তাকালেও কখনও কিছু বলেনি। ওদের নিয়েই চিন্তায় আছে পিপি। যদি আক্রমণ করে বসে! চিন্তা করা ছাড়া আপাতত কাজও পাচ্ছে না। কারণ অন্যদের মতো লাইন ধরে খাবার খুঁজতে তার ভাল লাগে না। সবাই খাবার জমা করার কাজে ব্যস্ত। সামনে নাকি বর্ষার মৌসুম। কিন্তু পিপি জানে, বর্ষা হলেও তার খাবার খুঁজতে সমস্যা...

কিশোর গল্প: কাকের ডিম

কিশোর গল্প, জাদু-বাস্তবতা
প্রশ্নটা গলা পর্যন্ত এসেও বের হচ্ছে না। কিছুতেই না। রাকিব জানে প্রশ্নটা এখন গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবু করতে ইচ্ছে করছে। অনেক্ষণ ভাবার পর যেই প্রশ্নটা করতে যাবে, তার আগেই ছেলেটা বলল- ‘নাও ধরো, সাবধানে ধরবে। ফেটে গেলে তুমি.. না না তুমি ফেরত দেবে কী করে, তুমি তো কাক না, মানুষ। তুমি কাকের ডিম পাড়বে কী করে।’ উত্তেজনায় রাকিবের হাত কাঁপছে। এ প্রথম সে একটা কাকের ডিম দেখছে। হুট করে মনে হলো, অনেক কিছুই এখনো সে প্রথমবারের মতো দেখেনি। ডিমটা ক্রিকেট বলের মতো পুরোপুরি গোল নয়। হাতের তালুতে সাবধানে আঁকড়ে ধরে আছে। ‘চেপে ধোরো না। ফেটে যাবে।’ কথাটা বলতে বলতে ছেলেটা এক দৌড়ে সামনের একটা ঝোপ থেকে একটা লম্বাটে চিকন কী যেন ছিঁড়ে নিল। ফুলের মতোই দেখতে। হাত দিয়ে ঘসে ওটার ফুলগুলো ফেলে কেবল কাণ্ডটা রাখলো। ঝটপট একটা গিট্টুও দিল। রাকিব ভাবছে, ছেলেটা এতো কিছু জানে কী করে। একই গাছ থেকে আরেকটা ডগা ছিঁড়লো। সেই ...