Friday, July 4
Shadow

Tag: ছোটগল্প

অঙ্কপুরের গল্প

অঙ্কপুরের গল্প

কিশোর গল্প
ধ্রুব নীল : মগডালে দুটো পা পেঁচিয়ে উল্টো হয়ে ঝুলে আছে ছোট্টা খোকা শূন্য। তার মারাত্মক মন খারাপ। আজকের ঝগড়াটা একটু একতরফা হয়ে গেছে। এক আর দুইয়ের সঙ্গে আজ একটুও পেরে ওঠেনি সে। দেখতে ছোট বলে এভাবে সবার সামনে অপমান করতে হবে? এক বলে কিনা, ‘তোর তো কোনো মান নেই, একেবারে অর্থহীন। তোর নামের মানে বুঝিস? এক্কেবারে ফাঁকা। ফাঁকা মানে ফক্কা, ফক্কা মানে জিরো, জিরো মানে শূন্য।’ তার সঙ্গে তাল মিলিয়েছে হতচ্ছাড়ি দুই। বেণী দুলিয়ে বলে, ‘তুই যে কেন আছিস তা তুই নিজেও জানিস না। এই আমাকেই দেখ না! সবচে ছোট মৌলিক সংখ্যা আমি, সবাই আদর করে। তুই তো অংকই না।’ মন খারাপ হলেই শূন্য গাছের ডালে পা আটকে উল্টো হয়ে ঝুলে থাকে। একদম স্থির। কেউ বুঝতেই পারে না। আজও তাই ঝুলে আছে। ঝুলতে ঝুলতে শূন্য ভাবছে তার শৈশবের কথা। তাকে অংকপুরে এনে দিয়েছিল আর্যভট্ট নামের এক ভারতীয় গণিতবিদ। তারপর গোটা বিশ্বে সেকি হই চই। তার কারণ...

বোধ

জাদু-বাস্তবতা, রোমান্টিক ছোটগল্প
গত ছমাস ক্ষণিকা হাসপাতালে। কোনো কাজ নেই। দিনরাত শুধু শুয়ে থাকা। প্রথম কদিন বেশ খারাপ লেগেছিল। পরে সয়ে এসেছে। বিছানায় শুয়ে চোখ বুঁজে ভাবাটাই এখন তার কাজ। মাঝে মাঝে বদ্ধ পরিবেশটায় সবকিছু অসহনীয় মনে হয়। কিন্তু চোখ বুঁজলেই মনে হয় সামনে অসীম দিগন্ত। হাসপাতালে ছমাস। অথচ ক্ষণিকার স্বামী তাকে একবারও দেখতে আসেনি। ইশ্, অন্তুটা না জানি কী করছে! সামনের ডিসেম্বরে তিনে পা দেবে। এই সেদিন টুকটুক করে কথা বলা শিখেছে। বদ্ধ পরিবেশটায় থাকলে সময় বোধহয় দ্রুতই যায়। ইমতিয়াজ কি অন্তুকে ঠিকমতো সময় দিচ্ছে? সে নিজেই তো ভুলোমনা। ক্ষণিকা এ জন্য তাকে একটা নামও দিয়েছে, ‘ভুলু’। সন্তান ও স্বামীর কথা অনেক ভেবেছে ক্ষণিকা। প্রথম দিকে খুব অভিমান জন্মালেও এখন আর তা নেই। চোখ বন্ধ করে চাইলেই সে এখন অন্তুকে আদর করতে পারে। কেবল ঠিকমতো কথা বলতে পারে না। কিছু বলতে গেলেই গা ঝাঁকিয়ে দৌড়ে পালাবে। আপাতত ভাবার মতো...
হরর গল্প: নিস্তার

হরর গল্প: নিস্তার

অতিপ্রাকৃত গল্প, হরর গল্প
লেখক: ধ্রুব নীল ঝড়ের ঝাপটায় তোশক চুপসে গেছে। রাজ্জাক জানালা বন্ধ করছে না। তার মনেও ঝড়। বাইরের ঝড়ের সঙ্গে মনের ঝড়ের কাটাকুটি খেলা হচ্ছে।দুই বছর নীলিমার প্রেমে হাবুডুবু খেয়েছে রাজ্জাক। এখনো চিঠিটা দেওয়া হয়নি। দিলেই তুলকালাম বেঁধে যাবে। কলেজের বণিক স্যারের মেয়ের সঙ্গে প্রেম বাড়িতে মেনে নেবে না। রাজ্জাকের বাবা রাধানগর মসজিদ কমিটিতে আছেন। ঘটনা ঘটলে ইজ্জতের বেড়াছেড়া লেগে যাবে। https://youtu.be/M2Z9TIitXb0 নীলিমা বললে রাজ্জাক এক শার্টে ঘরবাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়বে। সমস্যা হলো নীলিমা সেটা বলবে না। সে রাজ্জাককে বিশেষ পাত্তা দেয় না। রাজ্জাক প্রতিদিনই হ্যাংলার মতো গার্লস কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। তবে কাল থেকে দাঁড়াদাড়ি বন্ধ। কাল নীলিমার বিয়ে।বাইরে যে ঝড় হচ্ছে তাতে বিয়ের গেট লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়ার কথা। এমনটা ভেবেও রাজ্জাকের খুশি লাগছে না। একটু পর পর সিগারেট হাতে জানালার কাছে খাটে পা দুলিয়ে বসছে। ...
হরর ভৌতিক গল্প: রাজেন্দ্র সরকারের অপমৃত্যু

হরর ভৌতিক গল্প: রাজেন্দ্র সরকারের অপমৃত্যু

হরর গল্প
লেখক: ধ্রুব নীল ‘আজ রাত বারোটায় আত্মহত্যা করবো। মর্ত্যলোক ত্যাগের চূড়ান্ত ক্ষণের খুব বেশি বাকি নেই।’ ‘জি জ্যাঠামশাই।’ ‘ভাদুড়িকে সব বলা আছে। চব্বিশে আষাঢ়। সব ঠিকঠাক! সব! গাড়ি নিয়ে আসবে পৌনে একটায়। আমার ডেডবডি কফিনে ঢোকানোর দায়িত্ব তোমার। পরে যা করার ভাদুড়ি করবে। পারবে তো?’ ‘জি জ্যাঠামশাই।’ ‘বৈদ্যকে বলবে হাত লাগাতে। কফিন আটকে ভালোমতো লক করবে। ঝড়ও আসবে। ইলেকট্রিসিটি থাকবে না। যাও এখন বিদেয় হও।’ বয়স সত্তর ছুঁলেও মুগুরভাজা শরীর রাজেন্দ্র সরকারের। যমের মতো ডরায় বিজন। মা-বাপ হারা ছেলেটাকে কোলেপিঠে নয়, কেলিয়ে-পিটিয়ে বড় করেছেন। জাঁদরেল স্বভাবের কারণে নিজের সংসার হয়ে ওঠেনি। আবার বাইশ বছরের ভাইপোকে একটিবারের জন্য নিজের সন্তানও ভাবতে পারেননি। বিজনের সঙ্গে রাজেন্দ্র সরকারের সম্পর্কটা তাই প্রভু-ভৃত্যের মাঝামাঝি এক আলো-আঁধারিতে দোদুল্যমান। রাজেন্দ্র সরকারের কণ্ঠের স...

গুলজার মামা ও মাজন সন্ন্যাসী 

কিশোর গল্প, হরর গল্প
জুয়েল আশরাফ  গুলজার মামা ভূত বিশ্বাস করেন না। কেউ ভূতুড়ে গল্প বললে তেতে ওঠেন। মামা একটা কোম্পানিতে ম্যানেজার পদে চাকরি করেন। অফিসের কেউ যদি তার সাথে ভূতের ভয়ানক কিছু বলেন, তাহলে মামা ভয় পান না। মামা বলেন, ভূত বলে কিছু নেই। এ সবই মানুষের মনের ব্যাপার। একদিন অফিসে বেশি কাজ থাকায় রাতে মামা বাড়ি ফিরছিলেন। বাইক নিয়ে আরাম করে বাড়ি ফেরার পথে, হঠাৎ নির্জন রাস্তায় বাইক বন্ধ হয়ে যায়। রাত অনেক হয়ে গেছে, এসময় কোনো দোকান খোলা থাকে না। বাইক ঠিক করতে পারবে না ভেবে টেনে নিয়ে হাঁটতে লাগলেন। কিছুদূর পৌছে দেখলেন বাসস্টপের কাছে মাজন সন্ন্যাসী বসে আছে। একসময় সে মাজন বিক্রি করত, তাই ওই নাম। ব্যবসায় লাভবান হয়নি, মাজন ব্যবসা ছেড়ে হালে সন্ন্যাসীর বেশভূষা ধরেছে। আজকাল কেউ আঙুলের মাথায় ছাইপাঁশ লাগিয়ে দাঁত মাজে না। সবাই এখন টুথপেষ্ট আর টুথব্রাশে অভ্যস্ত।  অনেকক্ষণ ধরে বাইক টেনে নি...

বাবা বটের ছায়া

সামাজিক গল্প
ফারুক আহম্মেদ জীবন  শাওন আর শায়লার কোন ছেলে নেই। দুটো মেয়ে নাম চন্দ্রা আর তন্দ্রা। বড় মেয়ে চন্দ্রার বয়স খুব বেশি হলে আট বছর হবে। এবছর তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ছে চন্দ্রা। আর ছোট মেয়ে তন্দ্রার বয়স পাঁচ ছয় বছর মতো। কয়েক মাস হচ্ছে তন্দ্রা স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে। ওদের বাবা শাওন আদর করে দুই মেয়েকে ডাকে চন্দ্রা মণি আর তন্দ্রা মণি মা বলে।  আর ডাকবেই বা- কেনো? ওরা দু,বোন চন্দ্রা আর  তন্দ্রাই যে ওদের মা-বাবার প্রাণ। কলিজার বুটা, দুটি চোখের মণি। বলতে গেলে মেয়ে দুটোর জন্যই শাওন আর শায়লার পৃথিবীতে বেঁচে থাকা। ওরা দু,বোনই যেনো ওদের বাবা-মার পৃথিবী। কখনো মেয়ে দুটোকে ওরা চোখের আড়াল হতে দেয়না। বটবৃক্ষের ছায়ার মতো আদর, স্নেহ, আর ভালোবাসার সুশীতল মায়ার চাদরে আগলে রাখে মেয়ে দুটোকে। প্রতিদিন সকালে শায়লা ঘুম থেকে উঠে ওয়াশ রুমে গিয়ে দাঁত মেজে ফ্রেস হয়ে ওজু করে এসে ফজরের ন...

গল্প : আলাপ

জাদু-বাস্তবতা
‘তোমরা বান্ধবীরা মিলে কোথাও ঘুরতেও তো যেতে পারো। চাকরি থেকে ছুটি নাও কদিনের।’ জানালার কপাট খুলে গোলগাল চাঁদটাকে দেখতে দেখতে বলল সুজন। রেনু চোখ বুঁজে আছে। ‘তোমার কারণেই তো যেতে পারি না।’ মৃদু অনুযোগ। তবে ভিত্তিহীন। ‘তোমার বান্ধবীরা তো বেশ ঘুরছে। একজন আছে না, কী যেন নাম তার।’ ‘মিথিলার কথা বলছো?’ ‘হুম।’ ‘ও তো দুর্ধর্ষ। পাহাড়পর্বতে চড়ে বেড়ায়। টাকার অভাব নেই।’ চাঁদের আলো মুখে মেখে নিচ্ছে সুজন। নড়ে উঠল রেনু। কাটিয়ে নিল আড়ষ্টতা। ‘হুমম। এ জন্যই এমন ফিগার ধরে রাখতে পেরেছে। তুমিও ওর সঙ্গে পাহাড়ে চড়তে শুরু করে দাও না কেন।’ ‘কেন? শায়লার ফিগার কি খারাপ নাকি! ও তো পাহাড়ের ধারে কাছেও যায় না।’ ‘খোঁজ নিয়ে দেখো, ঠিকই ইয়োগা করছে।’ বলতে বলতেই রেনুর আঙুলের ফাঁকে নিজের আঙুলগুলোর জায়গা করে নিল সুজন। আজকের চাঁদটা বেশ বড়। আকাশটাও বারবার ফুলেফেঁপে উঠছে, চাঁদের খাতিরে...

বিবেক

সামাজিক গল্প
লেখক: নিরমিন শিমেল (প্রকাশ: কালবেলা) টাকাটা পড়ে আছে অলক্ষে, রাস্তার কোলঘেঁষে, যেখান থেকে ফার্মগেটের দীর্ঘ ওভারব্রিজটা মরাল গ্রীবা বাঁকিয়ে পাক খেয়ে ওপরে উঠে গেছে। বাসের জন্য অপেক্ষা করছে রঞ্জু। বারবার হাতঘড়ি দেখছে। রিফাতকে সময় দেওয়া আছে ঠিক ১০টায়। একটি টিউশনি জোগাড় করে দেওয়ার কথা। রঞ্জু আড়চোখে আরেকবার তাকাল। পঞ্চাশ টাকার চকচকে একটি লাল নোট। পাশাপাশি ভাবে ভাঁজ করা। কারও কি চোখ পড়েনি? পকেটে অবশিষ্ট সিগারেটটায় অগ্নিসংযোগ করে লম্বা টান দেয়। বিরক্তিতে ভ্রু জোড়ায় সুস্পষ্ট ভাঁজ। একটি চাকরিতে দরখাস্ত জমা দেওয়ার আজই শেষ তারিখ ছিল। পকেটের জীর্ণ দশায় ক্ষান্ত দিতে হয়েছে। মার কাছে অবশ্য সকালে হাত পেতে ছিল। বেশি না, মাত্র চল্লিশ টাকা। মায়ের কণ্ঠে ঈষৎ হতাশা মিশ্রিত রোষানল—এ নিয়ে কটা দরখাস্ত হলো বলত? উত্তর দেওয়া কিংবা টাকা নেওয়া দূরে থাক, জোঁকের মুখে নুন পড়ার মতো গুটি...

পল্টু ফটিক ও ছেলিম মামার গল্প

কিশোর গল্প, সায়েন্স ফিকশন
ধ্রুব নীলের সায়েন্স ফটিক দৌড়াচ্ছে। মাঠ ঘাট খাল বিল পেরিয়ে দৌড়েই যাচ্ছে। পেছনে কুকুর তাড়া করলে যেভাবে দৌড়ায় সেভাবে। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য বেঁচে থাকলে লিখতেন, ফটিক ছুটেছে ফটিক, তাই ঝুম ঝুম ঘণ্টা বাজছে… যাই হোক, ফটিক যাচ্ছে তার বন্ধু পল্টুর কাছে। পল্টুর বাসা ফুলতলা গ্রামের একেবারে শেষ সীমায়। দৌড়ে না গেলে বেলা পড়ে যাবে। উঠোনে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ জিভ বের করে হাঁফিয়ে নিল ফটিক। পল্টু দুপুরে ঘুমায়। লম্বা করে হাই তুলে বলল, পাগলা কুকুর তাড়া করেছে?ফটিক সূচনা ভূমিকায় না গিয়ে সোজা বর্ণনায় গেল।'মহাবিপদ হয়ে গেছে। মানে, বিশাল একটা ব্যাপার। ছেলিম মামা একটা জিনিস আবিষ্কার করেছে।'‘কী জিনিস রে! খাওয়া যায়? স্বাদ কেমন? মিষ্টি নিশ্চয়ই? সঙ্গে আছে?’‘আরে নারে! ছেলিম মামা অংক টংক করে বের করেছে, আমাদের এই গ্রাম আর আমরা সবাই একটা গল্পের ভেতর আছি। কাগজে ছাপা হওয়া গল্প। বুঝতে পারলি!’‘অ্যাঁ, বলছিস কী! আমি তুই গল্পের...
বিকেল পাঁচটার পর

বিকেল পাঁচটার পর

কিশোর গল্প, সায়েন্স ফিকশন
ধ্রুব নীলের সায়েন্স ফিকশন গল্প ১ সামছুল করিম কলেজে বছর বিশেক হলো অংক পড়ান আবদুল মতিন। বয়স ষাটের কাছাকাছি। এখনো শক্তসমর্থ। হাঁটাহাঁটি করেন সারাদিন। একই কলেজের পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক নেপাল চন্দ্রের সঙ্গে জমে ভালো। দুজনই সমবয়সী। বহুদিনের বন্ধুত্ব। ক্লাসের ফাঁকে সময় পেলেই দুজন বিজ্ঞানের কঠিন কঠিন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। আবদুল মতিন অবশ্য পদার্থবিজ্ঞানের অনেক কিছু না বুঝেও হাঁ হুঁ করে চালিয়ে যান। কঠিন আলাপের এক পর্যায়ে নেপাল চন্দ্র নিজেও খেই হারিয়ে মাথা দোলাতে দোলাতে চলে যান অন্য রুমে। ‘বুঝলি মতিন, সময় আমাদের চোখের সামনে থাকে। বয়ে যায়। কিন্তু আমরা সেটা বুঝতে পারি না। ধরতে পারি না। আমাদের মনে হয় ওটা একটা ফাঁকি। কিন্তু না। সময় জিনিসটা একেক জায়গায় একেক গতিতে চলে।’ ‘বিষয়টা আমার মুখস্থ। এই নিয়া পঁচানব্বইবার শুনছি।’ ‘না, ধর, সময় কোথাও আস্তে চলে, কোথাও দ্রুত। দুইটাকে পা...