Friday, July 4
Shadow

জাদু-বাস্তবতা

লাল ফুল

লাল ফুল

কিশোর গল্প, জাদু-বাস্তবতা
ধ্রুব নীল : সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে এক এক করে বত্রিশ পর্যন্ত গুনে ফেলেছে অন্তু। তবু ঘুম আসার জো নেই। মাকড়সার ঝুলের ভেতর একটা নীল পোকা আটকে আছে। ওটার দিকে তাকিয়ে থাকলেও অন্তু ভাবছে অন্য কিছু। মনে মনে নিজের বয়স হিসেব করলো একবার। তিন হাজার চুয়ান্ন থেকে বাষট্টি সাল। কতো হলো? সাত নাকি আট পেরুলো? মনে মনে ধরে নিল এখন তার বয়স আট। তারমানে এখন তার একটা গোপন কুঠুরী থাকতে পারে। যেমনটা ছিল তার দাদার। দাদার কথা মনে পড়তেই আবার চিন্তা ঘিরে ধরলো অন্তুকে। দাদা মারা গেছেন পাঁচ দিন হলো। কিন্তু অন্তু দাদাকে কখনই ভুলতে পারবে না। দাদা তাকে বিশাল এক দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। একটা বাক্স পাহারা দেয়ার দায়িত্ব। ওটা আছে ঘরের পেছনের একটা কড়ই গাছের গোড়ায়। মাটির তলায়। ওটাই এখন অন্তুর গোপন কুঠুরী। তাই অন্য সবার মতো ঘুমানোর আগে শেষবারের মতো গোপন কুঠুরীর সব ঠিকঠাক আছে কিনা তা দেখে আসার তাগিদ অনুভব করলো অন্তু। ...

কিশোর গল্প: কাকের ডিম

কিশোর গল্প, জাদু-বাস্তবতা
প্রশ্নটা গলা পর্যন্ত এসেও বের হচ্ছে না। কিছুতেই না। রাকিব জানে প্রশ্নটা এখন গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবু করতে ইচ্ছে করছে। অনেক্ষণ ভাবার পর যেই প্রশ্নটা করতে যাবে, তার আগেই ছেলেটা বলল- ‘নাও ধরো, সাবধানে ধরবে। ফেটে গেলে তুমি.. না না তুমি ফেরত দেবে কী করে, তুমি তো কাক না, মানুষ। তুমি কাকের ডিম পাড়বে কী করে।’ উত্তেজনায় রাকিবের হাত কাঁপছে। এ প্রথম সে একটা কাকের ডিম দেখছে। হুট করে মনে হলো, অনেক কিছুই এখনো সে প্রথমবারের মতো দেখেনি। ডিমটা ক্রিকেট বলের মতো পুরোপুরি গোল নয়। হাতের তালুতে সাবধানে আঁকড়ে ধরে আছে। ‘চেপে ধোরো না। ফেটে যাবে।’ কথাটা বলতে বলতে ছেলেটা এক দৌড়ে সামনের একটা ঝোপ থেকে একটা লম্বাটে চিকন কী যেন ছিঁড়ে নিল। ফুলের মতোই দেখতে। হাত দিয়ে ঘসে ওটার ফুলগুলো ফেলে কেবল কাণ্ডটা রাখলো। ঝটপট একটা গিট্টুও দিল। রাকিব ভাবছে, ছেলেটা এতো কিছু জানে কী করে। একই গাছ থেকে আরেকটা ডগা ছিঁড়লো। সেই ...

বনরুটির মা

কিশোর গল্প, জাদু-বাস্তবতা
ধ্রুব নীলের গল্প একটা ছিল ছোট বনরুটি। সবে মাত্র দোকানে এসেছে। এক রাতে আকাশে তাকিয়ে দেখে কত্ত বড় একটা বনরুটি। কিন্তু সেই বনরুটির মুখ গোমড়া। ওটা কি আমার মা? আমি নেই বলে মায়ের মন খারাপ? বনরুটি ঠিক করল, মায়ের কাছে যাবে। সুযোগ পেয়ে একদিন বনরুটি দিল লাফ। দোকান থেকে বের হয়ে গড়িয়ে চলল। গড়াতে গড়াতে শহরের রাস্তায় এসে পড়ল। আরে রাস্তায় এত বনরুটি! ঘর ঘর শব্দ করে সাঁই সাঁই করে ছুটছে ওরা। সেগুলোর ওপর আবার মানুষ বসেও থাকে। ছোট্ট বনরুটি গড়াতে গড়াতে গেল এক গ্রামে। সেখানে একটা গোলগাল জিনিস। পানিতে চুপচাপ বসে আছে। ‘ও ভাই, তুমি কি পানিরুটি?’ গোলগাল জিনিসটা বলল, ‘আমি রুটি না। পদ্মফুলের পাতা।’ রুটি গড়াতে গড়াতে গেল আরেক গ্রামে। এ পথে যায় ও পথে যায়। সামনে দেখে গোলগাল কী যেন একটা। রুটি ভাবলো, এ আবার কোন রুটি? সামনে সরু মাঝে গোল। পেছনে একটা লেজও আছে। ছোট্ট রুটিকে দেখে ফ...

বোধ

জাদু-বাস্তবতা, রোমান্টিক ছোটগল্প
গত ছমাস ক্ষণিকা হাসপাতালে। কোনো কাজ নেই। দিনরাত শুধু শুয়ে থাকা। প্রথম কদিন বেশ খারাপ লেগেছিল। পরে সয়ে এসেছে। বিছানায় শুয়ে চোখ বুঁজে ভাবাটাই এখন তার কাজ। মাঝে মাঝে বদ্ধ পরিবেশটায় সবকিছু অসহনীয় মনে হয়। কিন্তু চোখ বুঁজলেই মনে হয় সামনে অসীম দিগন্ত। হাসপাতালে ছমাস। অথচ ক্ষণিকার স্বামী তাকে একবারও দেখতে আসেনি। ইশ্, অন্তুটা না জানি কী করছে! সামনের ডিসেম্বরে তিনে পা দেবে। এই সেদিন টুকটুক করে কথা বলা শিখেছে। বদ্ধ পরিবেশটায় থাকলে সময় বোধহয় দ্রুতই যায়। ইমতিয়াজ কি অন্তুকে ঠিকমতো সময় দিচ্ছে? সে নিজেই তো ভুলোমনা। ক্ষণিকা এ জন্য তাকে একটা নামও দিয়েছে, ‘ভুলু’। সন্তান ও স্বামীর কথা অনেক ভেবেছে ক্ষণিকা। প্রথম দিকে খুব অভিমান জন্মালেও এখন আর তা নেই। চোখ বন্ধ করে চাইলেই সে এখন অন্তুকে আদর করতে পারে। কেবল ঠিকমতো কথা বলতে পারে না। কিছু বলতে গেলেই গা ঝাঁকিয়ে দৌড়ে পালাবে। আপাতত ভাবার মতো...

গল্প : আলাপ

জাদু-বাস্তবতা
‘তোমরা বান্ধবীরা মিলে কোথাও ঘুরতেও তো যেতে পারো। চাকরি থেকে ছুটি নাও কদিনের।’ জানালার কপাট খুলে গোলগাল চাঁদটাকে দেখতে দেখতে বলল সুজন। রেনু চোখ বুঁজে আছে। ‘তোমার কারণেই তো যেতে পারি না।’ মৃদু অনুযোগ। তবে ভিত্তিহীন। ‘তোমার বান্ধবীরা তো বেশ ঘুরছে। একজন আছে না, কী যেন নাম তার।’ ‘মিথিলার কথা বলছো?’ ‘হুম।’ ‘ও তো দুর্ধর্ষ। পাহাড়পর্বতে চড়ে বেড়ায়। টাকার অভাব নেই।’ চাঁদের আলো মুখে মেখে নিচ্ছে সুজন। নড়ে উঠল রেনু। কাটিয়ে নিল আড়ষ্টতা। ‘হুমম। এ জন্যই এমন ফিগার ধরে রাখতে পেরেছে। তুমিও ওর সঙ্গে পাহাড়ে চড়তে শুরু করে দাও না কেন।’ ‘কেন? শায়লার ফিগার কি খারাপ নাকি! ও তো পাহাড়ের ধারে কাছেও যায় না।’ ‘খোঁজ নিয়ে দেখো, ঠিকই ইয়োগা করছে।’ বলতে বলতেই রেনুর আঙুলের ফাঁকে নিজের আঙুলগুলোর জায়গা করে নিল সুজন। আজকের চাঁদটা বেশ বড়। আকাশটাও বারবার ফুলেফেঁপে উঠছে, চাঁদের খাতিরে...