ধ্রুব নীল: অতীতের সোনালী দিনের স্মৃতিগুলো নাকের তিন নম্বর ফুটো দিয়ে অনায়াসে ফুরুৎ করে উড়িয়ে দিতে পারেন ভয়ানস্কি। তাই নতুন করে প্ল্যান করতে তার কষ্ট হয় না। আগে ছিলেন ভুতুড়ে প্রাইভেট কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান। এখন হাউমাউ কোচিং সেন্টারের প্রধান ও একমাত্র শিক্ষক।
তিন জন ছাত্র। তিনটে বাচ্চা ভূত। চিকু বিকু নিকু। তারা এসেছে ভয় দেখানো শিখতে। মানুষকে ভয় দেখাতে না পারলে মা শাকচুন্নি তাদের খাওয়া বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ভয়ানস্কির ওপর তাই গুরুদায়িত্ব।

কুসুমপুর গ্রামের সুপ্রাচীন বটগাছের ঠিক মাঝ বরাবর একটা মোটা ডালের ওপরই গোটা ক্লাসরুম। একপাশে ভয়ানস্কির বসার মতো আরেকটা ডাল। তার পেছনে মিনি ডিজিটাল ডিসপ্লে। ভয়ানস্কির নিজস্ব আবিস্কার ওটা। ঐ ডিজিটাল যন্ত্রটার কারণেই ভয়ানস্কি তার বিজ্ঞাপনে লিখেছিলেন, ‘এখানে কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে ভয় দেখানো শেখানো হয়।’
রাত দশটা পার হতেই ক্লাস শুরু হয় ভয়ানস্কির। আজ প্রথম ক্লাস। চিকু বিকু ও নিকু দেখতে মোটামুটি একই রকম। তাদের তিনজনেরই মাথার ওপর অ্যান্টেনার মতো লম্বা একটা লিকলিকে শুঁড়। প্রত্যেকের দুটো করে গোল গোল চোখ। মানুষের মতোই মুখ। আর মাথা যেন অবিকল ফুটবল। দেখতে মোটেই ভয়ংকর লাগে না। আর এ নিয়ে তাদের মা-বাবার টেনশনের শেষ নেই। শুধু তাই নয়, ওদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত গোটা কুসুমপুরের ভূত সমাজ।
‘শোনো হে ভূতশিশুগণ। শোনো দিয়ে মন।’ এটুকু বলে একবার ঝেড়ে কাশলেন ভয়ানস্কি। গলা যতোটা সম্ভব গম্ভীর করে বললেন, ‘সবার আগে, হ্যাঁ সবার আগে খেয়াল রাখতে হবে, যেন কিছুতেই আমরা মানুষের কোনো আচরণে ভয় না পাই। ভয় পেলেও তা কিছুতেই প্রকাশ করা চলবে না। মানুষ যদি একবার বুঝতে পারে, শুধু একবার যদি বুঝতে পারে যে আমরাও তাদের ভয় পাই, তবে ভূতের ইতিহাসে সেদিনটি হবে ভয় দেখানোর শেষ দিন। বুঝেছ?’
বোকা বোকা মুখ করে শুড় দোলাল চিকু বিকু। নিকুর পড়ায় মন নেই। তার মন পড়ে আছে পুকুরপাড়ের প্রথম বাড়িটার জানালার দিকে। জানালার ওপাশে গভীর মনযোগে পড়াশোনা করছে একটা মানুষ ছেলে। মনে মনে ভাবছে নিকু। মানুষগুলো কাকে ভয় দেখানোর জন্য পড়ে কে জানে!
‘এই যে! কী নাম!’
‘জ্বিঁ স্যাঁর, আঁমি নিঁকু।’
‘খবরদার! নাকি সুরে কথা বলবে না! নাকি সুরে কথা বলতো ঊনবিংশ শতাব্দির ভূতেরা! তোমরা হচ্ছো এ প্রজন্মের স্মার্ট ভূত, বুঝলে!’
ভয়ানস্কি চাইলেও খুব একটা রাগ করতে পারছেন না। বাচ্চা ভূতদের ওপর তিনি রাগ করতে পারেন না। চিকু বিকুদের দিকে তাকালেই তার শৈশবের কথা মনে পড়ে যায়।
‘বুঝলি! আমি যখন তোদের মতো ছিলাম, আহা! কতো বাচ্চাকে যে ভয় দেখিয়েছি! ভয় দেখানোর কতো যে উপায় আবিস্কার করেছি…।’ ভয়ানস্কি অতীতের জগতে খানিক্ষণ ঢুঁ মেরে বিশেষ সুবিধে করতে পারলেন না। তার আগেই নিকু জিজ্ঞেস করলো, ‘ভঁয় দেকালে কী হঁয়?’ ভয়ানস্কি তার তিন নাম্বার চোখটা কুঁচকে ফেললেন। প্রশ্ন শুনে মহাবিরক্ত। তবে উত্তরটা তৈরিই ছিল। ‘শোন তবে, মানুষের মতো ভূতদের খাবার-দাবার, কাপড়, রোগ-বালাই, ঘরবাড়ি এসব নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। কিন্তু তাই বলে কিছু যদি না করি তাহলে বিবর্তনের পর আমরা নিজেদের আর ভূত বলে বিশ্বাস নাও করতে পারি। ওহ বিবর্তন মানে হলো ধর, আস্তে আস্তে পাল্টে যাওয়া, যেমন অনেক আগে ছিল এক ধরনের ভূত। তা থেকে বিবর্তন হয়ে এলো সাধারণ ভূত আর রাক্ষস।’
এ পর্যন্ত বলে ভয়ানস্কি তার লেকচারের খেই হারিয়ে ফেললেন। তারপর আবার বলা শুরু করলেন। ‘হ্যাঁ, ব্যাপারটা হচ্ছে, তোরা যদি এখন ভয় না দেখাস, তাহলে ভূত হিসেবে তোরা পরিচয় সঙ্কটে পড়ে যাবি। নিজেদের তোরা আর ভূত বলে মানতে চাইবি না। মানুষের সঙ্গে মেশা শুরু করে দিবি। তাতেই ঘটবে ভূতসত্ত্বার বিলুপ্তি।’
নিকু লম্বা একটা হাই তুলে বলল, ‘স্যার, সবই বুঝলাম, কিন্তু ঐ পরিচয় সঙ্কট জিনিসটা কী? যেখানে আমরা পড়ে যাব?’
ভয়ানস্কি উত্তর না দিয়ে চোখ বন্ধ করে বললেন, ‘তোদের প্রথম পরীক্ষা শুরু হবে এখুনি। প্রথমে নিকু। তুই যাবি ঐ (পুকুরপাড়ের বাড়িটার জানালার দিকে দেখিয়ে) ছেলেটাকে ভয় দেখাতে। আমি দেখতে চাই তোর ভেতর কী লুকানো প্রতিভা আছে।’
নিকু ভীষণ ঘাবড়ে গেল। ভয় দেখাতে হবে ভেবে ভয়ে সে নিজেই আধখানা। গলা শুকিয়ে কাঠ। একটু জোছনার আলো গিলতে পারলে বেশ হতো। কিন্তু ভয়ানস্কির অগ্নিমূর্তি দেখে সেই ইচ্ছে চলে গেছে। তার কাছে মনে হচ্ছে, সে আসলেই পরিচয় সঙ্কটে পড়েছে।
‘কুইক!’
তড়াক করে লাফিয়ে পড়লো নিকু। মাথার তুলনায় শরীরটা অনেক ছোট। তবে ভেসে থাকতে সমস্যা হয় না। যাওয়ার একটুও ইচ্ছে নেই। তবু মনে হচ্ছে বাতাস তাকে ঠেলে ঐ পুকুরঘেঁসা বাড়িটার দিকে এগিয়ে নিচ্ছে।
জানালার কাছাকাছি আসতেই নিকু খানিকটা নিচু হয়ে যায়। আরেকটু উঠলেই জানালার ওপারের কিম্ভূতদর্শন এক মানুষ ছেলে। মাথায় কালো কালো চুল। দুটো মাত্র চোখ। কথার শোনার জন্য দুপাশে দুটো ফুটো। দেখলেই ভয় করে।
নিকু বড় করে ঢোঁক গিলল। কী করবে বুঝতে পারছে না। পাড়ার বড় ভাই মামদোর কাছে শুনেছে মানুষের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসি দিলেই নাকি ভয়ে ওরা চিৎপটাং। সেও কি তাই করবে? কিন্তু মামদোর মতো তো তার বড় বড় দাঁত নেই। ফোকলা মুখে হাসলে কি তাকে ভয়ংকর দেখাবে?
ভাবার সময় কম। একটা কিছু করতেই হবে। তা না হলে ভয়ানস্কি স্যার তাকে স্কুল থেকে বের করে দেবেন। তখন নির্ঘাৎ গেছো মিয়া তাকে দিয়ে ফুটবল খেলবেন। গেছো মিয়া হচ্ছে নিকু বিকুদের বাবা। বাবার কথা মনে হতেই কুঁকড়ে গেল।
একগাদা ভয় নিয়ে জানালা দিয়ে উঁকি দিল নিকু। মানুষ বাচ্চাটা ঘুমে ঢুলুঢুলু। ঘুমিয়ে পড়লে মহাবিপদ। তার আগেই ভয় দেখাতে হবে। নিকু মাথাটা আরেকটু উপরে উঠালো। এরই মধ্যে দুটো নেড়ি কুকুর তাকে দেখেছে। তারা অবশ্য দুতিনবার ঘেউ ঘেউ করে চলে গেছে। নিকু ঢোক গিলল। কুকুরই ভয় পেলো না, মানুষ পাবে কী করে! নিকু মাথাটা আরেকটু উঁচু করলো। মানুষ বাচ্চাটা মনে হয় তাকে দেখতে পেয়েছে। কেমন যেন চোখ পিটপিট করে তাকাচ্ছে। নিকু সঙ্গে সঙ্গে মুখটা চওড়া করে ফেলল। হাসার আপ্রাণ চেষ্টা করছে।
‘ওমা! ভূত দেখি হাসে!’
ভয়ে নিকু চোখ বন্ধ করে রেখেছিল। শব্দ শুনে একটা চোখ খুলল। মুখের ফাঁক তখনও বন্ধ হয়নি। শুধু বুঝতে পারলো সে কাঁপছে। ভয়ে কাঁপছে! মনে হলো এতোটুকু শক্তি নেই বায়বীয় শরীরটায়। মানুষ বাচ্চাটা তার দিকে তাকিয়ে হাসছে! নিকুর কল্পনায় যে দৃশ্যটা ভেসে উঠলো তা হচ্ছে, গোটা কুসুমপুরের সবকটা ভূত তার দিকে আঙ্গুল উঁচিয়ে রেখেছে। একপাশে তার বাবা গেছো মিয়াকে সবাই ধরে রেখেছে। ছাড়া পেলেই নিকুকে এক লাথিতে আফ্রিকা পাঠিয়ে দেবেন। দূরে দাঁড়িয়ে মা শাকচুন্নি কেঁদে বুক ভাসাচ্ছে। ছোট ছোট পেত্নিরা তাকে সান্তনা দিচ্ছে।
‘এই তোমার নাম কী!’
নিকু আর ভাবতে পারছে না। মানুষ বাচ্চাটা তার নাম জিজ্ঞেস করেছে। সেকি ভয় দেখানোর জন্য কিছু একটা করবে নাকি নাম বলবে বুঝতে পারছে না। কানের মধ্যে এখনো ভয়ানস্কির কথাটা বাজছে। মানুষকে কিছুতেই বুঝতে দেয়া যাবে না যে একটা ভূত তাকে ভয় পাচ্ছে।
‘আঁমি ভূঁত!’ বহুকষ্টে গলার ভেতর থেকে শব্দ বের করলো নিকু। কিন্তু একি! মানুষটা হাসছে কেন!
‘হ্যাঁ, তাতো বুঝতেই পারছি! ভূত না হলে মাথা এমন ফুটবলের মতো হবে কেন?’ অল্পের জন্য ডুকরে কেঁদে ওঠেনি নিকু। ফুটবলের কথা শুনেই কেমন যেন বমি বমি লাগছে তার। এখন কী করবে! ভয়ানস্কির সামনে দাঁড়ানোর সাহস উবে গেছে। বাড়িতেই বা যাবে কোন সাহসে?
‘কী হলো! তোমার শরীর খারাপ? প্যারাসিটামল খাবে?’ নিকু কোনো মতে কুঁ কুঁ করে বলল, এঁকটু বাঁতিটা ঘুঁরিয়ে দিঁন। আঁলো খাঁবো।’ ‘বাহ মজার তো!’ এই বলে মানুষ ছেলেটা তার টেবিল ল্যাম্পটা সামান্য উঁচিয়ে ধরলো। নিকু ঢকঢক করে আলো গিলল খানিক্ষণ।
‘এবার বল, কেন এসেছ?’ নিকু কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। একবার পেছনে ফিরে তাকালো। ভয়ানস্কি, চিকু বিকুরা কী ভাবছে কে জানে। যা ইচ্ছে ভাবুক। সে তোর ফিরে যাচ্ছে না। কিন্তু যাবে কোথায়?
‘কই বললে না তো। কেন এসেছো?’ নিকু বলল, ‘ভঁয় দেঁকাতে।’ ‘কাকে? আমাকে? হুঁম। বেশ মজার। নিকু মাথা নিচু করে আছে। প্রচণ্ড হতাশ। তাকে দিয়ে আসলে কিছু হবে না।
‘ভয় দেখাবে কেন শুধু শুধু?’
‘স্যার বলেছে ভঁয় নাঁ দেঁকালে, পঁরিচয় সঁঙ্কটে পঁড়ে যাঁব।’
‘অ্যাঁ! তাই নাকি! বল কি!’ মানুষ বাচ্চাটার মুখে একথা শুনে কেমন যেন ভাল লাগলো নিকুর। যাক ছেলেটা তাহলে তার সমস্যা বুঝতে পেরেছে। এরপর নিকু ধীরে ধীরে সবই বলল। বাবার মারের কথা। মায়ের খাবার বন্ধ করে দেয়ার হুমকি। পাড়ার ছোট ছোট পেত্নিদের উপহাস, ভয়ানস্কি স্যারের ক্লাস। কিছু বাদ দিল না। সব শুনে ছেলেটা কিছুক্ষণ ভাবলো। তারপর গম্ভীর কণ্ঠে বলল, ‘হুম তার মানে এখন আমাকে ভয় পেতে হবে।’ নিকুর মুখে যেন আলো জ্বলে উঠলো। মানুষ ছেলেটা বলল, ‘আমি ভয় পেলেই তো সব সমস্যা মিটে যায়, তাই না?’ এবার আসল হাসিতে নিকুর মুখ চওড়া হয়ে গেল ‘অ্যাঁ! হ্যাঁ! হ্যাঁ!’
‘আচ্ছা ঠিকাছে আমি তাহলে ভয় পাওয়ার ভান করি। কিন্তু করবোটা কী? ওরে বাবারে মারে বলে চিৎকার দেব?’ নিকু চোখ কুঁচকে ভাবা শুরু করলো। যদিও খুশিতে সে কিছু ভাবতে পারছে না। খুশির চোটে তার কথায় চন্দ্রবিন্দু উধাও। পরিষ্কার কণ্ঠে বলল, ‘জ্বি, ভাল হয় যদি একটু জোরে চিৎকার দেন। সবাই যেন শোনে। দূরে আমার স্যার আর ভাইয়েরা আছে। ওদের কানে পৌঁছাতেই হবে কিন্তু।’
‘আচ্ছা ঠিকাছে। তুমি দুহাত উঁচু করে আমার দিকে তাকাও। চেহারাটা একটু ভয়ানক করে দাঁড়াও। আমি রেডি হই।’ মানুষ ছেলেটা বড় করে দম নিল। এরপর সে যা করলো তার জন্য নিকু মোটেই প্রস্তুত ছিল না। গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে বিকট চিৎকার দিয়ে উঠলো ছেলেটা। টেবিলের বই ছড়িয়ে ছিটিয়ে একাকার। ল্যাম্পটা কাত হয়ে আলো গিয়ে পড়লো নিকুর গায়ে। ছেলের চিৎকার শুনে দৌড়ে বাবা-মা হাজির। ছেলেটা ততোক্ষণে চোখ উল্টে ফেলেছে। গোঁ গোঁ শব্দ করে বলল, ভূ..ত!! মা! ভূ..ত! এরপর আবার কান ফাটানো চিৎকার।
ঘরের ভেতর অন্ধকার। কিন্তু ল্যাম্পের আলোয় নিকুর শরীর জ্বলজ্বল করছে। দেখতেও ভয়ংকর লাগছে। এবার ছেলের মা দেখলেন তাকে। তিনিও আঁতকে উঠলেন। এরপর গগনবিদারী আরেক চিৎকার। পাড়াশুদ্ধ লোক জেগে উঠলো। বিশাল হই চই লেগে গেছে। নিকু তখনো জানালার ওপাশে শূন্যে ভাসছে। মুহূর্তের মধ্যে পুরো ব্যাপারটা সে বুঝে ফেলেছে। ভয় জিনিসটা আসলে একজন থেকে আরেকজনের মধ্যে দ্রুত ছড়ায়। এখন সবাই তাকে দেখে চিৎকার দিচ্ছে। দুচারজন জ্ঞানও হারিয়েছে।
এক ফাঁকে মানুষ ছেলেটা নিকুর দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে দিল। নিকু বুঝে গেল, এখন তার যেতে হবে। দেরি না করে সুরুৎ করে জঙ্গলের ভেতর ঢুকে গেল নিকু।
‘ওয়েলডান মাই ডিয়ার চাইল্ড। আই এম প্রাউড অফ ইউ।’ ভয়ানস্কির কথা শুনে নিকু যেন প্রাণ ফিরে পেল। চিকু বিকুও তার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। তাদের বিশ্বাসই হচ্ছে না, প্রথমদিন নিকু গোটা গ্রামবাসীকে এমন ভয় গিলিয়ে দিয়েছে।
পরের দিন। কুসুমপুরে উৎসবের আমেজ। খালের পাশের সুপুরি জঙ্গলে নিকুদের বাড়িতে যেন মেলা বসেছে। পেত্নির দল সেই কখন থেকে নেচে যাচ্ছে। কন্ধকাটা মোড়ল এসে কয়েবারবার গেছো মিয়ার পিঠ চাপড়ে দিয়েছেন। এদিকে ভর্তির ফরম বিক্রি করতে করতে ক্লান্ত ভয়ানস্কি। নিকুর সাফল্যে তার কোচিং সেন্টারে ছাত্র এখন কয়েকশ।
কিন্তু নিকু? আপাতত সে কোথায় আছে কেউ জানে না। তবে কুসুমপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ক্লাস নাইনে পড়া সেই মানুষ ছেলেটাকে দেখা যাচ্ছে পড়ার রুমে বিড় বিড় করে কার সঙ্গে যেন কথা বলছে।
‘হুম, তাহলে তুমি পড়াশোনা করতে চাও। কিন্তু করে কী হবে? তুমি তো ভূত।’
‘তা ঠিক। তবে তোমরা তো অনেক মজার মজার জিনিস শেখ। আমারও ইচ্ছে করে শিখতে। ভয় দেখাতে একদম ভাল লাগে না।’
‘কিন্তু ভয় না দেখালে তো, পরিচয় সঙ্কটে পড়ে যাবে। তখন?’
‘হে হে হে.. মাঝে মাঝে একটু ঐ দিনের মতো চিৎকার.. হে হে হে।’ দুজনের হাসি আর থামেই না।