Monday, December 15
Shadow

মানুষ পাখি অদলবদল

ধ্রুব নীল

একটা আছে আষাঢ়ে পাড়া। কোথায় আছে? জানি না।

আষাঢ় এলেই আজব ঘটনা ঘটে সেখানে। আষাঢ় মাসে নামে ঝুম বৃষ্টি। বৃষ্টি শেষেই ঘটে আজব ঘটনা। গ্রামের সব পাখি হয়ে যায় মানুষ। মানুষরা সব হয়ে যায় পাখি। একদিন আষাঢ়ে পাড়ায় শুরু হলো ঝমঝম বৃষ্টি। তারপর ঘটনাটা ঘটলো।

ইশকুলের স্যার হয়ে গেলেন একটা বক পাখি। ক্লাসের মিনি হয়ে গেলো মাছরাঙা। তার বন্ধু রবি হয়ে গেলো একটা চড়ুই।

বক স্যারের খিদে লেগেছে। মাছ পাই কোথায়? স্যারের মনে পড়লো বক পাখিরা মাছ ধরতে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে পানিতে। মাছ দেখলেই খপ করে তুলে নেয় ঠোঁটে। তিনিও তাই করলেন। দাঁড়িয়ে রইলেন এক পায়ে।

ছুটে এলো ছোট মাছরাঙা মানে আমাদের টুনি।

সে বলল, আমি ছোঁ মেরে একটা পুঁটি ধরেছি স্যার।

ফুরুৎ করে এলো চড়ুই। সে হলো রবি। চড়ুই রবি বলল, মিনি, দানা কুড়াবে? ওই ছাদে অনেক চাল আছে। আমি প্রতিদিন চড়ুইদের জন্য ছাদে চাল ছিটিয়ে রাখি। আজ নিজেই সেটা কুড়িয়ে খাবো। তুমিও চলো।

বাহ কী মজা। কোনো পড়াশোনা নেই। সারাদিন উড়ে বেড়াও আর এটা ওটা খাও।

ভরপেট খেয়ে চড়ুই আর মাছরাঙা গেলো তাদের ইশকুলে। গিয়ে তো অবাক। ক্লাসের মানুষগুলো বসে বসে পাখির বাসা বানানো শিখছে। কারণ ওরা তো আগে পাখিই ছিল। তাদের আবার একজন স্যারও আছে।

‘স্যারের নাম কী?’

জানতে চাইল মাছরাঙা মিনি।

পাখি স্যার বলল, আমার নাম বাবুই। আমি বাসার কারিগর। সবাইকে বাসা বানানো শেখাই। মানুষ হয়ে গেছি। তাই মানুষের মতো ইশকুলে বসে শিখছি।

ক্লাসের অন্য মানুষ-পাখিদের মন খারাপ। তাদের অনেকে বললো. ভালো লাগছে না আমাদের। এভাবে ঘরে বসে বসে কিছু শেখা যায় নাকি!

মিনি আর রবি ভাবলো, তাই তো, পাখি হয়ে উড়তে উড়তে শিখলে তো অনেক মজা। ঘরে বন্দি থেকে পড়াশোনা করতে কারো ভালো লাগে নাকি!

‘তোমরা আর কী কী শিখবে?’ জানতে চাইল চড়ুই রবি।

ইশকুলের আরেকটা মানুষ-পাখি বলল, এবার আমরা ফল খাওয়া শিখবো। কোন ফলের কী গুণ সেটাও শিখবো।

মাছরাঙা মিনি বললো, আমরা সবাই মিলে সব শিখতে পারি। আমি তোমাদের ফল খাওয়া শেখাতে পারি।

চড়ুই রবি বলল, আমি শেখাবো কী করে দুটো পাকা পেয়ারা আর দুটো পাকা পেয়ারা যোগ করে চারটা পাকা পেয়ারা গুনতে হয়।

এবার ক্লাসের আরেকটা পাখি-মানুষ বললো, আগে চলো ভাই। এই ঘর থেকে বের হই। এখানে দম আটকে আসছে। গাছ-পালা, বন আর নদীর কূল, এই হবে আমাদের ইশকুল।

সবাই গেলো নদীর পাড়ে। মাছরাঙা মিনি আর চড়ুই রবি তো অবাক। তাদের বক স্যার তখনও একপায়ে দাঁড়িয়ে। তার লম্বা ঠোঁটে একটা মাছও আছে। বক স্যার মাছ ধরে অনেক খুশি।

‘এই যে দেখো মাছ ধরেছি। আমি পাখি হওয়া শিখে গেছি। হুররে।’

এরপর আবার নামলো ঝুম বৃষ্টি। আজব ঘটনাটা আবার ঘটলো। মানুষরা আবার মানুষ হলো, পাখিরা আবার পাখি হলো।

কেউ ফুরুৎ ফারুৎ উড়ছে, কেউ ফল পাড়ছে। তবে কিছুই বদলায়নি যেন। বাবুই পাখি ফল গুনতে শিখছে। টুনি আর রবি শিখছে পাখির বাসা বানানো।

এদিকে ইশকুলের স্যার কী করছে? তিনি তো মানুষ হয়ে গেছেন। ওমা! মানুষ হয়ে গেলেও তিনি একপায়ে পানিতে দাঁড়িয়ে আছেন। পড়ানো বাদ দিয়ে তিনি ধরছেন মাছ!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *