Monday, June 30
Shadow

ভয়ানস্কির চ্যালেঞ্জ

কিশোরদের জন্য ধ্রুব নীলের মজার ভূতের গল্প

দ্য ভৌতিক টাইমস পত্রিকাটা হাতে নিতেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেল ভূতবিজ্ঞানী ভয়ানস্কির। প্রথম পাতায় বড় বড় করে লেখা।

চাঁদের আলোর ভয়াবহ সঙ্কট

আলোর পাশাপাশি বেশি করে আলু খান

নিজস্ব ভূতাংদিক, পোড়াবাড়ির ছাদ থেকে: মানুষের তৈরি উঁচু উঁচু ভবনের আড়ালে আশঙ্কাজনক ভাবে ঢাকা পড়েছে চাঁদ। গত এক মাসে তাই চাঁদের আলোর দাম বেড়েছে লিটারপ্রতি দশ টাকা। এ নিয়ে তিন দফা আলোর দাম বাড়লো। এ পরিস্থিতিকে ভূতাধিকারের চরম বিপর্যয় বলেছেন দেশের অন্যতম ভুতবিজ্ঞানী ভয়ানস্কি। তিনি আরো বলেছেন, ‘আমরা ভূতরা যদি মানুষের দেখাদেখি আলোর পরিবর্তে বেশি করে আলু খাওয়া শুরু করি, তাহলে খাদ্যসঙ্কট কিছুটা কমতে পারে।’

মজার ভূতের গল্প

এটুকু পড়েই পত্রিকাটা ছুড়ে ফেললেন ভয়ানস্কি। ইদানীং কন্ধকাটাগুলোকে দিয়েই সংবাদ লেখানো হচ্ছে। মাথা থাকলে কি আর এসব হাস্যকর কথা লেখে! আলু খাওয়ার ব্যাপারটা তিনি মজা করে বলেছিলেন। কিন্তু হতচ্ছাড়া ভূতাংদিকগুলো (ভূত সাংবাদিক) মজাও বোঝে না! আলু খেতে পারলে ভূতরা কি আর শখ করে আলো খায়!

মেজাজ খারাপ হলে ভয়ানস্কির মাথা ঠিকমতো কাজ করে না। অথচ আজ তার একটা টক শো’তে যাওয়ার কথা। সেখানেও নিশ্চয় তাকে পত্রিকার এ খবর নিয়ে প্রশ্ন করা হবে। ‘উফ্, কি যে উত্তর দেব, ভূত সমাজে আর ইজ্জত রইলো না।’ রাগ ঝাড়তে ঝাড়তে এগিয়ে চললেন ভয়ানস্কি।

বেশ ভয়ে ভয়ে হাউমাউ টিভি চ্যানেল সেন্টারের দিকে যাচ্ছেন ভূতবিজ্ঞানী। মনে মনে ঠিক করেছেন, টক শো’র উপস্থাপিকা শাকচুন্নিকে আগেই ইশারায় বুঝিয়ে দিতে হবে। মেয়েটা তার ইশারা বুঝবে কিনা এ নিয়ে একটু ভয় অবশ্য আছে। তা না হলে পকেটে রাখা স্যাটেলাইট জ্যামার দিয়ে সাময়িকভাবে টেলিভিশন সম্প্রচার বন্ধ রাখা ছাড়া উপায় নেই।

রাজধানীর ভূতেরগলির চতুর্থ ম্যানহোলের ঠিক নিচ বরাবর সেট সাজানো হয়েছে। ওখানেই একটি পুরনো বস্তায় বসে আছেন ভয়ানস্কি। তার সামনে সেজেগুজে একটা কিম্ভূত মাইক্রোফোন হাতে বসে আছে শাকচুন্নি। মাইকটা দেখতে অনেকটা আলুর মতো। ক্যামেরাম্যান মামদো এখনো রেডি হয়নি। মাইক্রোফোনটা দেখার পর থেকেই ভয়ানস্কি অল্প অল্প ঘামছেন। ক্রমাগত ইশারা করে আসলেও শাকচুন্নির মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। মনে হচ্ছে প্রথম প্রশ্নটাই হবে আলো বনাম আলু নিয়ে।

কথা নেই বার্তা নেই হুট করেই মাইক্রোফোন ফাটিয়ে শাকচুন্নি বলে উঠলো, ‘সুঁধী ভূঁতসমাজ, থিংকিং লাঁইক আঁ ভূঁত অঁনুষ্ঠানে আঁপনাদের ¯ঁ^াগতম। আঁমাদের আঁজকের অঁতিথি হঁচ্ছেন পঁঞ্চান্নবার গোঁবেল পুঁরস্কারজয়ী বিঁশ্বের অঁন্যতম ভূঁত বিঁজ্ঞানী ভঁয়ানস্কি ভুঁতোকোভ।’ এক থাপ্পড়ে ক্যামেরার মাথাটা ভয়ানস্কির দিকে তাক করে দিল মামদো। অনেকটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভয়ানস্কির মুখের ফুটোটা চওড়া হয়ে গেল। তিনি আপ্রাণ হাসার চেষ্টা করছেন।

‘তোঁ ভঁয়ানস্কি, আঁজকের দ্যঁ ভৌঁতিক টাঁইমস পঁত্রিকার হেঁডলাইন দিঁয়েই শুঁরু কঁরা যাঁক। আঁপনি বঁলেছেন..।’

শাকচুন্নির নাকি নাকি কথা শুনে ভয়ানস্কির মেজাজ এতোটাই খারাপ হলো যে তিনি স্যাটেলাইট জ্যামারের কথা ভুলে গেলেন। ঘোঁৎ করে হাল্কা কাশি দিয়ে বলতে শুরু করলেন ভয়ানস্কি।

‘আসলে ব্যাপারটা কি, একটা সময় ছিল যখন আলু আর আলো দেখতে একই রকম ছিল।’ ভয়ানস্কির কথা শেষ না হতেই শাকচুন্নি বলল, ‘সে তো বিলিয়ন বছর আগের বিগ ব্যাংয়ের সময়। তখন আলোর ঘনত্ব ছিল আলুর মতোই। কিন্তু এ সময়ে আলু আর আলোর মধ্যে আপনি এমন কী মিল খুঁজে পেলেন?’

শাকচুন্নি মুখে বিজ্ঞানের কথা শুনে ভয়ানস্কির চেহারা বাংলা পঞ্চান্নর মতো হয়ে গেল। মনে মনে ভাবলেন, সামনে ক্যামেরা আছে বলেই সেদিনকার পুঁচকে মেয়েটা দুকলম বিজ্ঞান পড়ে তাকে জ্ঞান দেয়ার সাহস পাচ্ছে। কিন্তু মুখে বললেন, ‘তা ঠিক তা ঠিক, তবে ব্যাপারটা হচ্ছে এখন তো আলু আর আলো এক নয়, একটা ধরা যায় অন্যটা যায় না। কিন্তু আমরা যদি আলুর মতো আলোর চাষ করতে পারি তবে সমস্যাটা থাকবে না। আমি আসলে বলতে চেয়েছি যে আলুর মতো আলোরও চাষ করা সম্ভব।’

শাকচুন্নি খানিকটা হতাশ সুরে বলল, ‘কিঁন্তু আঁলোর চাঁষ তোঁ কিঁছুতেই সঁম্ভব নঁয়, বিশুদ্ধ চাঁদের আঁলো নাঁ পেঁলে তোঁ ভূঁতরা পুঁষ্টি পাঁবে না। আঁমরা খঁবর পেঁয়েছি টঁর্চ লাঁইটের আঁলো খেঁয়ে এঁর মঁধ্যে দুঁটো জেঁলার পাঁচজন কেঁলে ভূঁতকে হাঁসপাতালে যেঁতে হঁয়েছে।’

ভয়ানস্কি কিছু বলার আগেই শাকচুন্নি এবার বিশুদ্ধ উচ্চারণে হড়বড় করে বলে উঠলো, ‘সুধী দর্শকবৃন্দ আমাদের হাতে এরই মধ্যে আরো কয়েকটি পত্রিকা এসেছে। আমি এখন এর হেডলাইনগুলো পড়ে শোনাচ্ছি। ভূতের দিন পত্রিকা লিখেছে, ‘ভয়ানস্কিকে মানুষে ধরেছে, তা না হলে আলু খেতে বলেন?’

মনে মনে প্রচণ্ড অপমানিত বোধ করলেও ভয়ানস্কি হাসিমুখেই বসে আছেন। পত্রিকাগুলো ইদানীং বেশ রসিক হয়েছে। মানুষকে এককালে ভূতে ধরতো। এখন প্রায়ই মানুষ ভূতকে ধরে। অথচ তার মতো বিজ্ঞানীকে মানুষে ধরবে এমনটা ভাবলো কী করে ওরা! এরই মধ্যে দ্বিতীয় হেডলাইন পড়া শুরু করে দিয়েছে শাকচুন্নি। কোনো এক রহস্যজনক কারণে তার কণ্ঠে চন্দ্রবিন্দু উধাও। বোধহয় অনুষ্ঠানকে সিরিয়াস করার চেষ্টা করছে।

‘দৈনিক পোড়াবাড়ি লিখেছে, সুখে থাকায় মানুষে কিলিয়েছে ভয়ানস্কিকে।’

উফফ! আবার সেই জঘন্য প্রবাদ! কোন এক কালে সুখি মানুষকে ভূতে কিলিয়েছিল, আর তা এখনও ভূতের পত্রিকার শিরোনাম হয়ে যাচ্ছে!

শাকচুন্নি থামছে না। ‘তৃতীয় হেডলাইনটা পড়ে শোনাচ্ছি শেষ রাতের কাগজ থেকে, ‘ভবনের আড়ালে ঢেকে গেছে চাঁদ, ভয়ানস্কির আবার মরিবার হলো সাধ’।

শাকচুন্নির হাসি যেন মুখ থেকে খুলে পড়ে যাবে। সে হা করে তাকিয়ে আছে ভয়ানস্কির দিকে। একটা কিছু শোনার আশায়। ভয়ানস্কি ঝিম মেরে এতোক্ষণ শুনছিলেন। প্রচণ্ড রাগ উঠলে তিনি এমন চুপ করে থাকেন। এদিকে মামদো বারবার জুম করে ভয়ানস্কির গম্ভীর চেহারাটাই দেখাচ্ছে।

প্রচণ্ড জোরে ঝাঁকি দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালেন ভয়ানস্কি। শাকচুন্নির হাত থেকে মাইক্রোফোন প্রায় পড়েই যাচ্ছিল। তড়িঘড়ি করে তা উঠিয়ে নিয়ে ভয়ানস্কির মুখের সামনে ধরলো। ভয়ানস্কির তিনটি হাতই সামনে এগিয়ে গেল। একটা হাত দিয়ে শাকচুন্নির হাত থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নিলেন। এরপর ক্যামেরার ঠিক সামনে দাঁড়ালেন। মামদো বেচারা বোকার মতো হা করে তাকিয়ে রইলো।

গলা ঝেড়ে নিয়ে বলতে শুরু করলেন ভয়ানস্কি, ‘সুধী দর্শক, আমি ভয়ানস্কি ভুতোকোভ। এতোদিন আপনাদের কী দিতে পেরেছি জানি না। তবে আজ আমি সাধারণ ভূত ও ভূতাংদিকদের উদ্দেশ্যে একটা কথাই বলবো। তা হচ্ছে, আলোর সঙ্কট আর থাকবে না। আলুর মতো চাঁদের আলোর চাষ করে আমি দেখিয়ে দেব। এটা আমার চ্যালেঞ্জ। শুধু কটা রাত সময় দরকার। আপনারা ভাল থাকবেন। আমি যাচ্ছি। শীঘ্রই দেখা হবে। কথা দিচ্ছি খালি হাতে ফিরবো না।’

মামদো এবার ক্যামেরা তাক করেছে শাকচুন্নির দিকে। কিন্তু তার মুখে কোনো কথা নেই। সে ইশারায় মামদোকে ক্যামেরা অফ করতে বললেও কাজ হচ্ছে না। দর্শকরা সবাই এখন দিশেহারা শাকচুন্নিকে দেখছে। ‘ইয়ে মানে। সুধী দর্শক.. ইয়ে.. আজকের মতো.. ’। ব্যস এটুকুই বলতে পারলেন। তার আগেই বন্ধ হয়ে গেল হাউমাউয়ের সম্প্রচার। কেননা, ম্যানহোল থেকে বের হয়েই জ্যামার চালু করলেন ভয়ানস্কি।

মতিঝিলের মাঝামাঝি সুয়ারেজ লাইনের গোপন এক সুড়ঙ্গের এক কোণে এলুমিনিয়ামের দেয়াল দিয়ে ভয়ানস্কি তার হেডকোয়ার্টার বানিয়েছেন। রুমের ভেতর আরশোলার ছড়াছড়ি। একটা বস্তার ওপর সারি সারি ডিসপ্লে স্ক্রিন রাখা। তাতে গ্রহ নক্ষত্রের ছবি ভাসছে। বস্তার সামনে একটা ভাঙা চেয়ারে বসে আছেন ভয়ানস্কি। তিনটের মধ্যে দুটো চোখ বোজা। বাকিটা দিয়ে তিনি একটা স্ক্রিন দেখছেন। ওটায় দেখা যাচ্ছে প্রকাণ্ড এক চাঁদ। কেমন যেন পরোটার মতো দেখাচ্ছে।

মাথার খুলিটা খুলে খানিক্ষণ মগজ চুলকে নিলেন। এতে যদি কোনো বুদ্ধি বের হয়! চাঁদের তো আলো নেই। সূর্যের আলোকে ফিল্টার করে পৃথিবীতে পাঠায়। ঐ রকম একটা ফিল্টার বানাতে পারলেও হতো। কিন্তু ওটা কাজ করবে বলে মনে হয় না। চাঁদের আলো চার লাখ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে আসে। তাই ওটার গুরুত্ব আলাদা।

আরশোলার জেলি মাখানো রুটি কামড়ে ভাবতে শুরু করলেন ভয়ানস্কি। কিন্তু খাচ্ছেন না। মনযোগ বাড়বে তাতে। মানুষের কারণে যে ভূতদের এতোবড় সমস্যায় পড়তে হবে তা তিনি স্বপ্নেও ভাবেননি। তারউপর আবার এ বিশাল সমস্যার সমাধান বের করার চ্যালেঞ্জ হাতে নিয়েছেন তিনি। 

গভীর মনে ভাবছেন ভয়ানস্কি। মানুষ আলো নিয়ে এককালে কতো কী করেছে। কতো গবেষণা। আলোর চেয়ে বেশি গতি নাকি হতেই পারে না। তবে বিশেষ ব্যবস্থায় ভয়ানস্কি আলোর গতি কমিয়ে এনেছিলেন। এতে করে আলোর পুষ্টিগুণ বেড়ে গেল হু হু করে। রয়েল ভূত-সোসাইটির গবেষকরা তাকে সম্মান করে অঁক্টরেট ডিগ্রি দিয়েছিল। নাহ্, অতীত স্মৃতিতে ডুবে থাকলে হবে না। তারচেয়ে মানুষের তৈরি ইন্টারনেটে একটু খোঁজাখুজি করা যাক। ইন্টারনেট! ভয়ানস্কি চমকে উঠলেন। মানুষের তৈরি ইন্টারনেট! ভয়ানস্কি থমকে গেলেন। মনে হচ্ছে তিনি কী যেন খুঁজে পেলেন, কিন্তু উত্তেজনায় ঠিকমতো ভাবতে পারছেন না। তিনটি চোখ বড় বড় করে খোলা। মাথা বাঁকিয়ে একনজর ইন্টারনেটের কেবলের দিকে তাকালেন। পুরনো যুগের একটা অপটিক্যাল ফাইবার। একটা সরু পাইপের মতো। ওটা দিয়েই সব তথ্য আদান-প্রদান হয়।

ইঁয়ু ইঁয়ু ইঁয়ু! তীব্র চিৎকারে ম্যানহোল কাঁপিয়ে তড়াক করে লাফিয়ে উঠলেন ভয়ানস্কি। ‘আই গট দ্য পাওয়ার!’ উত্তেজনায় দুলাইন গানও গাইলেন। শূন্যে ভাসতে ভাসতেই রিমোট কন্ট্রোলারের বাটন চাপলেন। একটা স্ক্রিনে ভেসে উঠলো ভয়ানস্কির ইঞ্জিনিয়ার বন্ধু থমথমে চৌধুরির দুই শুঁড়ওয়ালা মাথা।

‘ইয়েস ভয়ানস্কি। কী কী লাগবে শুধু বল।’

‘শোনো! থমথমে। আমি পেয়ে গেছি! আমি.. আমি পেয়ে গেছি!’ উত্তেজনায় ভয়ানস্কি ঠিকমতো বলতে পারছেন না।

‘হুম, খুব বড় কিছু মনে হচ্ছে। খুলে বল। চাঁদের আলো নিয়ে কিছু না তো? টিভিতে তো দেখলাম বেশ রাগ দেখিয়ে এসেছো।’

‘হ্যাঁ, পেয়ে গেছি! সমাধান খুব সহজ। খুউব! শোনো.. তোমাকে যা করতে হবে। তা হচ্ছে একটা নকশা। মানুষের মতো একটা অপটিক্যাল ফাইবার তৈরি করতে হবে। আলো ট্রান্সফার করা হবে তাতে। ইন্টারনেটে যেভাবে ডাটা আসে, সেভাবে! হ্যাঁ সেভাবে আমরা চাঁদের আলো নিয়ে আসবো!’

থমথমে চৌধুরির চেহারাটা ক্ষণিকের জন্য থমথমে হয়ে গেল। কিছুক্ষণ ভাবার পর কী যেন বলতে যাচ্ছিল, তার আগে ভয়ানস্কি তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, ‘শোনো! মানুষের মতো অতো ছোট নয়, অনেক চওড়া হবে আমাদের কেবল। মানুষের বিল্ডিংয়ের পাশের পানির পাইপের ভেতর দিয়ে ঐ তার সোজা ছাদে চলে যাবে! তার উপর পড়বে চাঁদের আলো। একবার ফাইবার অপটিকের ভেতর আলো ঢুকলেই হলো। বার বার প্রতিফলিত হতে হতে ওটা এসে পৌঁছাবে শেষ প্রান্তে! সোজা আন্ডারগ্রাউন্ডে! আঁকাবাঁকা তার হলেও কোনো সমস্যা হবে না। সবার ঘরে ঘরে একটা করে ফাইবার অপটিক তার থাকবে। ওটা যুক্ত হবে অনেকগুলো সেন্ট্রাল কানেকশনের সঙ্গে। একেবারে ইন্টারনেটের মতো!’

থমথমের চেহারায় হাসি ফুটে উঠলো। শুঁড় নাচিয়ে বলল, ‘নো প্রোবলেম মাই ফ্রেন্ড। ওয়েট এন্ড সি। পুরোটাই বুঝতে পেরেছি।’

পাঁচ দিন পর। টক শোতে এসেছেন ভয়ানস্কি। আজ তার মেজাজ খুব ফুরফুরে। অনেকদিন পর আবার পৃথিবীর সকল ভূত তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। পত্রিকাগুলো তার প্রশংসায় অষ্টমুখ। শাকচুন্নিকেও আজ বেশ লাগছে। তার মাথায় ফ্রান্সের রান্নাঘর থেকে আনা পুরনো ন্যাকড়া দিয়ে বানানো ফিতে। ভয়ানস্কির সম্মানেই ওটা পরেছে। আজ নাকি সূরেও কথা বলছে না। অনুষ্ঠান শুরু হতেই শাকচুন্নি একগাল হেসে পত্রিকা হাতে নিল। ‘সুধী দর্শক, দ্য ভৌতিক টাইমস লিখেছে, ‘ভয়ানস্কির বুদ্ধি ভাল, তারের ভেতর আলো!’ ভূতের দিন লিখেছে, ‘ভবন ডিঙ্গিয়ে আলো আনলেন ভয়ানস্কি।’ দৈনিক পোড়াবাড়ি, ‘আলোর বন্যায় ভাসছে ম্যানহোল, সাবাশ ভয়ানস্কি!’ শেষ রাতের কাগজ, ‘যখন যায় ডুবে আকাশের চাঁদ, ভয়ানস্কির আছে আলো ধরিবার ফাঁদ।’

মামদো ক্যামেরাটা ভয়ানস্কির দিকেই ধরে রেখেছে। শাকচুন্নির ইশারাতে কাজ হচ্ছে না। ক্যামেরা তার দিকে না ফেরালে প্রশ্ন করবে কী করে। ভয়ানস্কিও কী বলবেন বুঝতে পারছেন না। তিনি হাসি হাসি মুখে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে আছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *