Monday, June 30
Shadow

স্যোশাল এক্সপেরিমেন্ট

ধ্রুব নীল: দুলাভাই রসিক মানুষ। সংসারি না। আমার মতে উনি অ্যাকসিডেন্টাল বিয়ের শিকার। বিষয়টা আপা জানতে পারলে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে যাবে। বাংলায় এর মানে ভীষণ কলহ। এটা তো ডেইলি রুটিন। সুতরাং ঘটনা তুলকালামের চেয়েও ভয়াবহ হবে।

যখন যেটা মাথায় আসে, একচোট এক্সপেরিমেন্ট চালান দুলাভাই। সামাজিক বিজ্ঞানের ছাত্র হয়েও করতে হচ্ছে ব্যাংকের চাকরি। এ কারণে পাকস্থলীর গ্যাসের মতো এক্সপেরিমেন্টের বাসনা তার বুকের কাছে আটকে থাকে। বুকে পোষা পুরনো প্রেমের বেদনা নয় এটি। এ সুপ্ত বাসনা বারবার গলা চেপে ধরে, অস্থির করে তোলে।

ধ্রুব নীলের গল্প রম্য রচনা

‘শালাবাবু, চলো ভিডিও বানাই। ইউটিউব ভিডিও। লাখ লাখ টাকা কামাব।’

‘আপনি আবার টাকার লোভে পড়লেন কবে?’

‘না মানে এক্সপেরিমেন্টও হলো, আবার টু-পাইসও এলো।’

‘লাখ থেকে টু-পাইসে নেমে এলেন। এরপর বলবেন, টাকাপয়সা হাতের ময়লা। ভিডিওই আসল।’

‘একটা আইডিয়া এসেছে।’

আমি কল্পনায় তর্ক চালিয়ে গেলাম কিছুক্ষণ। বুঝলাম, জেতা যাবে না। অগত্যা উঠে বসলাম।

‘চলেন।’

‘সে কী! এক বাক্যে রাজি!’

‘ঘটনা তো আপনি ঘটাবেন। আমি বেকার লেখক। বসে বসে দেখব।’

‘মন্দ বলোনি। একটা কিছু না ঘটানো চাই। কবি রুমি বলেছেন অন্যের জীবনের গল্প শুনিয়া দিনাতিপাত করিও না। নিজের গল্পের ডালি মেলিয়া ধরো। সুতরাং এমন কিছু করতে হবে যাতে আমাকে নিয়ে গল্প লেখে বিশিষ্ট কোনো লেখক।’

সেই ‘বিশিষ্ট’ লেখক আমার হওয়ার কথা থাকলেও আপাতত আমি ক্যামেরাম্যান। এক্সপেরিমেন্টের টাইটেল, ‘আমাদের মানসিকতা দিন দিন কোন দিকে যাচ্ছে?’ ইউটিউবের জন্য এমন টাইটেল নাকি কাজে আসে। প্ল্যানটা হলো দুলাভাই কোনো এক ব্যস্ত ফুটপাতের একপাশে টুল নিয়ে বসবেন। তার মুখে বাঘের মুখোশ থাকবে (কেউ যাতে না চেনে)। সামনে প্ল্যাকার্ডে লেখা থাকবে ‘আমাকে যতখুশি বিরক্ত করুন, কিচ্ছু বলব না।’

আমার কাজ হলো গোপনে ভিডিও করা। কাকপক্ষীও যেন টের না পায়।

দুই মিনিট কিছুই ঘটল না। লোকজন প্ল্যাকার্ড দেখে ভুরু কুঁচকে দাঁড়াচ্ছে আবার চলে যাচ্ছে। আমি যথারীতি ধৈর্য হারিয়ে মোবাইলটা পকেটে ঢুকিয়ে ফেললাম। পরে বলব, রেকর্ড বাটন চাপতে ভুলে গেছি।

মোবাইল পকেটে রাখতেই ঘটনা ঘটতে লাগল। বাঙালি লজ্জাবতীর পাতার মতো। সামনের পাতা গুটিয়ে যেতে শুরু করলে বাকিরাও গুটিয়ে যায়। আবার তার বিপরীতটাও সত্য। একটা টোকাই মতোন ছেলে ডাস্টবিন থেকে আবর্জনা নিয়ে দুলাভাইর গায়ে ঢেলে দিল। নতুন শার্ট ময়লায় ভরে গেছে। ছেলেটার তাতে আনন্দের সীমা নাই। ভদ্রলোকের গায়ে নোংরা ফেলেছে। মহা আনন্দের ব্যাপার।

পানের পিক ফেলে পেটমোটা লুঙ্গিপরা এক লোক নির্বিকার ভঙ্গিতে দুলাভাইর শার্টের কলারটা টেনে মুখ মুছে নিল। আমি হা করে কাণ্ড দেখছি। লোকজন বিরক্ত করার ব্যাপারে এত সৃজনশীল! সবচেয়ে বেশি যেটা ঘটল সেটা হলো গুঁতো। সরাসরি গুঁতো নয়, পাশ থেকে একটা কিছু কুড়িয়ে নিয়ে তারপর গুঁতো। প্রমাণিত হলো মানুষ গুঁতো দিতে ভালোবাসে।

আধাঘণ্টা কেটে গেল। চলে যাব কিনা ভাবছি। এক নারীর বজ্রকণ্ঠ শুনে থমকে দাঁড়ালাম। হাতের ব্যাগটা দিয়ে দুলাভাইকে বাড়ি দিলেন গোটাকতক। এরপর শাসিয়ে চলেছেন ক্রমাগত। দুলাভাইর মুখে টুঁ শব্দ নেই। কৌতুহলী দর্শকের সারিতে আমিও ঢুকে পড়লাম। আশপাশে অনেকে আবার ক্যামেরা তুলে ভিডিও করছে। মহিলা বারবার কয়েকটাই কথাই বলছেন, ‘আজ শুক্রবার সেটা মনে আছে? ভং ধরে রাস্তায় পড়ে থেকে কী বোঝাতে চাও! তুমি সন্ন্যাসী হইবা? সন্ন্যাসী হওয়ার আগে আগামী তিন মাসের ডিপিএস-এর কিস্তি আর বাজারের টাকা রেখে যাবা। নইলে মামলা করব!’

‘ইয়ে মানে আপা আপনার ভুল..।’ মিনমিন করে বললাম।

‘চুপ করেন মিয়া! রাস্তায় ঝামেলা বাঁধলে সবসময় মেয়েদের দোষ ধরতে আসেন। আপনি লাস্ট কবে কৃমির ওষুধ খাইসেন বলেন দেখি?’ দর্শকসারিতে প্রবল হাসির তোড়।

আমি আর শব্দ করলাম না। ভাবলাম দুলাভাইর তো মহিলার গলা শুনে বুঝতে পারার কথা।

‘শোনো! আজই শেষ। রোজ রোজ এমন খেলা কেন খেলতেসো, সেটা বুঝি! তোমারে ডিভোর্স দিচ্ছি না আমি সহজে। বুঝলা! তোমার লাইফ ত্যানা ত্যানা কইরা ছাড়ব! নতুন শার্টটা কিনে দিলাম তিন দিন হয় নাই। তুমি সেটার মধ্যে গু নিয়ে বসে আছো। তুমি জানো কোন মাছ গু খায়? টাকি মাছে খায়।’

আচমকা প্ল্যাকার্ড ছুড়ে মুখোশ খুলে দাঁড়িয়ে গেলেন দুলাভাই। এতক্ষণের জমানো রাগ ভিসুভিয়াসের মতো ফুঁসে উঠল। আঙুল তুলে তোতলাতে তোতলাতে বললেন, ‘আমার যা মন চায় করব। আপনার খাই না পরি! আমার মন চাইলে বত্রিশ দিন এখানে বসে থাকব। চৌত্রিশ দিন বাজার করবো না! হিজ হিজ হুজ হুজ! গেট আউট! গেট আউট!’

এরপর কানে শুধু একটা কথাই এলো.. ‘ইয়ে মানে, আমার স্বামীও আপনার মতো এই শার্ট পরেন কিনা…।’

দুলাভাই জনসভার উদ্দেশে বললেন, ‘বিরক্ত হবো না ভালো কথা। তাই বলে আমাকে টাকি মাছ বলবে কেন!

dhrubonil@yahoo.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *