Site icon গল্প

খোকার ঈদ

মো. আশতাব হোসেন : কোরবানি ঈদের চাঁদ দেখে চঞ্চলের খুশির সীমা নেই।  ঈদের আর ক’দিন বাকি আছে চঞ্চল প্রতিনিয়ত গুণতেই আছে । তার অপেক্ষা যেন শেষ হচ্ছে না।  ইতোমধ্যেই তার বাবা মজিদ সরকার চঞ্চলের ঈদের নতুন জামাকাপড় কিনে দিয়েছে।

চঞ্চল তার বন্ধু বান্ধবদের ডেকে এনে নতুন পোশাকগুলি দেখায় রোজ রোজ। কেউ যদি বলে, বাহ্! তোমার পোশাকগুলি অসাধারণ হয়েছে। তাহলে তার  খুশির সীমা থাকে না।পাশের বাড়ির এক বয়স্ক মহিলা যাকে চঞ্চলসহ তার বয়সী সকল ছেলেমেয়েরা দিদা বলে ডাকে, তাকে হাত ধরে নিয়ে আসে চঞ্চল তার নতুন পোশাক দেখানোর জন্য। বুড়ি তো ঠিকমতো চোখেই  দেখে না বয়সের ভারে। কিন্তু ছোট চঞ্চল এতোকিছু বুঝে না।

সে পোশাক বের করে বলে, ‘ দিদা, আমার ঈদের পোশাকগুলি কেমন হয়েছে দেখো তো? দিদা হাতে নেড়ে নেড়ে চঞ্চলের জিন্সের প্যান্ট দেখে বলে,  ‘বেশতো চঞ্চল,  খুব মোটা আছে। শীতের মধ্যে আরাম হবে, শীত লাগবে না  তোর।’ এরপর বুড়ি পাঞ্জাবি হাতিয়ে দেখে বলে,  ‘এটা খুব পাতলা, এটা পড়লে শরীর দেখা যাবে’। এসব শুনে চঞ্চলের  মন একেবারে খারাপ হয়ে গেলো । কাঁদতে কাঁদতে তার মাকে বলে, ‘আমি এসব কিছুই পরব না মা।

দিদা বলেছে একটি শীতের জন্য ভালো হবে, আর একটিতে শরীর দেখা যাবে। এমন পোশাক পরে বাহিরে গেলে লোকে আমাকে পাগল বলবে। চঞ্চলের মা তো ভারি মুশকিলে পড়ে গেলো! কি করে যে ছেলেকে  বুঝাবে চিন্তায় পড়ে গেলো। চঞ্চলের বাবা বাড়িতে ফিরলে চঞ্চলের মা তার বাবাকে বলে, ‘কী যে জ্বালায় পড়লাম, তোমার ছেলে ঈদে নতুন পোশাক পরবে না।’ সে বলে একটি শীতের কাপড় আর একটি পড়লে শরীর দেখা যাবে।

পাশের বাড়ির বুড়ি মাকে ডেকে এনে তোমার ছেলে সব পোশাক  দেখিয়েছে। বুড়ি মা চঞ্চলকে এমন কথা বলেছে। তাই তোমার ছেলে মন খারাপ করে বলে, এসব সে পরবে না। চঞ্চলের বাবা বলে বুড়ি মার আর দোষ কি? সে তো চোখেই ভালো দেখে না। তাকে দেখিয়ে চঞ্চল জানতে চেয়েছে, বুড়িমাতো সত্যটাই বলেছে। মোটা একটা আর একটি পাতলা। এখন তাকেও তো দুষতে পারছি না।

চঞ্চলের বাবা মজিদ সরকার  হেসে হেসে বলে, একজন শিশু আর একজন বুড়ো! মানে মানুষ বুড়ো হলে শিশুর মতো হয়ে যায় । তাই এই দুই শিশুর কথা বাদ দাও। এই বলে মজিদ সরকার পাশের বাড়ির গোলাপির মাকে ডেকে এনে ছেলের সামনে পোশাকগুলি বের করে দিয়ে বলে, ‘দেখোতো গোলাপির মা, চঞ্চলের ঈদের পোশাকগুলি কেমন হয়েছে।’ গোলাপির মা দেখে বলে বাহ্ বাহ খুবই সুন্দর তো, চঞ্চলকে খুব মানাবে।  এমন পোশাক আমিও আমার খোকার জন্য আজই কিনে নিয়ে আসব।

এইসব কথা শুনে চঞ্চল আনন্দে সব পোশাক আলমারিতে রেখে দেয়।  ঈদের দিন সকালে গোসল করে নতুন পোশাক পরে খুশিতে তার মায়ের রান্না সেমাই ফিন্নি খেয়ে নামাজ পড়তে যায় তার বাবার সাথে। নামাজ পড়ে এসে সবার সাথে চঞ্চল ও তার বাবা কোরবানি করতে যায় তাদের পোষা বড় খাসিটা নিয়ে। খাসিটা মজিদ সরকার খুব শখ করে পালন করেছিলো কোরবানি করার জন্য। ছোট চঞ্চল খুব আদর করতো খাসিটিকে। নিজের হাত দিয়ে খাওয়াতো ধরে ধরে। আজ তাকে জবাই করতে দেখে ছোট চঞ্চলের চোখে পানি ঝরতে থাকে। এবার কান্নাভরা কণ্ঠে চঞ্চল বলে উঠে হে আল্লাহ,  এটা আমার খুব প্রিয় খাসি  ছিলো, তুমিও প্রিয় মনে করে কবুল করে নিও ।

গ্রাম :ইসলামাবাদ  ; ডাকঘর : বলদিয়া 

উপজেলা : ভূরুঙ্গামারী

জেলা: কুড়িগ্রাম। 

Exit mobile version