রহস্যজট : ইলশেগুড়ি

রহস্যজট কিডন্যাপ অপহরণ

ধ্রুব নীল: শুভ চলে যেতেই কফির মগ হাতে উঠোনের মতো জায়গাটায় রাখা দোলনায় গিয়ে বসলো ইরিনা। ঢাকায় এমন আঙিনাওয়ালা বাড়ি হাতে গোনা। চারপাশে অ্যাপার্টমেন্টের ছড়াছড়ি। পুরনো আমলের বাড়িটাও যে কবে বাড়িওয়ালা বিল্ডার্সদের দিয়ে দেয়।

রহস্যজট কিডন্যাপ অপহরণ

আকাশে এখনও মেঘ। রাতে বান্ধবীরা আসবে সবাই। তার স্বামী গেছে চট্টগ্রামে, ব্যবসার কাজে। আগামীকাল ফেরার কথা। বান্ধবীরাও সবাই কোনও না কোনও চাকরিতে। বৃষ্টি দেখে আজ সবাই ইরিনার হাতের খিচুড়ি খেতে চেয়েছে। পাশাপাশি তিন চার পদ রান্না করবে বলেও ঠিক করলো। তুলির পছন্দ পটলের দোলমা আর ফৌজিয়ার চাই বিফ চিলি। নাজলা আবার ইদানীং মাংস খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। তার জন্য সবজি।
রান্না চড়িয়ে আবার উঠোনে এলো ইরিনা। বাড়িটা একেবারে নীরব। দোতলায় ভাড়াটিয়া থাকে। আজ সম্ভবত নেই। উঠোনে রাখা দোলনায় দুলতে দুলতে ইরিনা ফোন দিল নাজলাকে। খানিক খোঁজখবর নিয়েই বুঝতে পারলো মেয়েটা কোনও একটা ঝামেলায় আছে। ঠিকঠাক কথা বলতে পারছে না। এদিকে ফোটা ফোটা বৃষ্টি পড়তে শুরু করলো আবার।
তড়িঘড়ি করে উঠে গিয়ে ঘরে ঢুকতে যাবে এমন সময় ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়টা সতর্ক করে দিল ইরিনা। সহসা পেছনে তাকাতে পারলো না। কিন্তু ঘাড়ের শিরশিরে অনুভূতিটা স্পষ্ট বলে দিল কেউ একজন পেছনে দাঁড়িয়ে আছে এবং তার হাতে একটা অস্ত্র আছে।
‘কোনও শব্দ নয়। আমার রিভলবারে সাইলেন্সার লাগানো আছে।’
‘কী চান আমার কাছে।’
‘সেটা ভেতরে গিয়ে বলছি। সোজা ঢুকে পড়ো।’
ঘরে ঢুকেই লোকটা দরজা লাগিয়ে দিল। ঘুটঘুটে অন্ধকার। লোকটা দেয়াল হাতড়ে সুইচবোর্ড খুঁজে নিল। বাতি জ্বালানোর ঠকাস শব্দে চমকে উঠলো ইরিনা। ঘরের ভেতর গুমোট একটা গরম। লোকটা উঠে গিয়ে আরেকবার সুইচবোর্ডে শব্দ করে ফ্যানের সুইচ অন করলো। ইরিনার কানেই হয়তো শব্দগুলো জোরে শোনাচ্ছে। সে চেষ্টা করছে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক থাকতে। মুখোশ পরা লোকটার মুখোমুখি হয়নি এখনও। ছিঁচড়ে গুন্ডা মাস্তান যে নয় এটুকু নিশ্চিত। নিশ্চয়ই পুরনো কোনও শত্রু। এ পর্যন্ত গোটা বিশেক কেস তো সমাধান করেছে। খুনিও ধরা পড়েছে অনেক। তাদের মধ্যেই কেউ হবে হয়তো। ইরিনা আড়চোখে যতটা পারলো দেখলো। গায়ে লম্বা জ্যাকেট আর মাথায় কাউবয় হ্যাট। হাতে সত্যি সত্যিই লম্বা নলওয়ালা রিভলবার। ইরিনার দিকেই যেন তাকিয়ে আছে শীতল ধাতব নলটা।
‘বসো।’
সোফার দিকে ইঙ্গিত করলো। ইরিনা বসতেই লোকটা তার সামনে চেয়ার টেনে বসলো। মুখোশের কারণে গলার স্বরও চেনা যাচ্ছে না।
‘কোনও শেষ ইচ্ছা?’
‘হুঁ।’
‘কী সেটা জলদি বলে ফেলো।’
‘একটু পর বৃষ্টি আসবে। নাজলা আর তুলিরাও আসবে। বাসায় কোল্ড ড্রিংকস নাই। মোড়ের দোকান বন্ধ। তুমি যদি একটু কষ্ট করে বাজার থেকে নিয়ে আসতে তাহলে আমি বেঁচে যাই।’
‘মানে কী!’
‘মানে হলো কোল্ড ড্রিংকসের সাথে যদি পাও তাহলে একটু চটপটিও নিয়ে এসো। ওরা আসলে পরে গরম করে খাওয়া যাবে।’
‘আমি এখন তোমাকে গুলি করবো। এটা খেলনা পিস্তল না!’
‘আর তুমি বাজারে না গেলে তোমার মাথা ফাটাবো। ভাল কথা ছাতা নিয়ে যাও। বৃষ্টি আসবে।’
‘উফফ। এটা কোনও কথা হলো। তুমি স্রেফ আন্দাজ করে বলেছো তাই না?’
‘জ্বি না মশাই। এটা আন্দাজ না। চোখ কান খোলা থাকলে সবই বোঝা যায়।’
‘কিন্তু এটা অসম্ভব!’
রহস্যময় কিন্তু চিরচেনা সরল হাসিটা দিল ইরিনা। ছদ্মবেশী স্বামীকে চিনতে তার একটুও ভুল হয়নি। উত্তর দেখুন নিচে

ইরিনা বুঝতে পেরেছে কারণ আগন্তুক অন্ধকারে সুইচবোর্ড হাতড়ে সঠিক সুইচ চেপে বাতি জ্বালিয়েছে। তার সুইচ চিনতে কোনো কষ্ট হয়নি।

উত্তর: অন্ধকারে লোকটা পর পর দুটো সুইচ ঠিক মতো চালু করেছে। ঘরের লোক ছাড়া এভাবে পর পর দুটো সুইচ ঠিক মতো অন করা প্রায় অসম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *