Site icon গল্প

তেঁতুল গাছের ভূত

সাঈদুর রহমান লিটন

গ্রামের এক কোণে ছিল একটা পুরোনো তেঁতুল গাছ। লোকমুখে প্রচলিত ছিল, এই গাছে ভূতেরা বাস করে। সন্ধ্যা নামলেই কেউ আর ঐ পথ মাড়াত না। বড়রা বলত, ওই গাছের নিচে গেলে শাঁকচুন্নি ধরে নিয়ে যাবে। শিশুদের ভেতর এই গল্প বলে ভয়  জাগাত।শিশুরাও ভয় পেত। ছোট্ট রাফি ছিল অন্য রকম। সে খুব কৌতূহলী আর সাহসী ছেলে। ভূতের গল্প শুনে ভয় পেত ঠিকই, কিন্তু ভাবত, ভূতেরা কি সত্যিই খারাপ? তারা কি আমাদের মতো কেউ, না অন্য কিছু? মানুষ সবচেয়ে বুদ্ধিমান। মানুষ ওদের ভয় পাবে কেন?

একদিন বিকেলে স্কুল থেকে ফিরে রাফি ঠিক করল, সে গাছটা দেখতে যাবে। মায়ের চোখ এড়িয়ে সে সোজা হেঁটে গেল তেঁতুল গাছের দিকে। সূর্য তখন ডুবে যাচ্ছে, চারদিকে হালকা আঁধার। তবুও রাফির বুক কাঁপল না। গাছটার নিচে গিয়ে সে বলল, হ্যালো, তেঁতুল গাছের ভূত? তুমি কেমন আছো?

একটা নরম, বাতাসের মতো শব্দ শোনা গেল, তুমি ভয় পাচ্ছো না? রাফি একটু ভয় পেয়ে গলা শক্ত করে বলল, না,  আমি ভয় পাচ্ছি না। আমি তোমার বন্ধু হতে এসেছি। গাছের ডাল থেকে ধীরে ধীরে একটা ছোট্ট ছায়ামূর্তি নেমে এল। তার চোখ দুটো ছিল বড় বড় এবং ভয়ংকর । সে বলল, আমার নাম মিষ্টি। একা একা গাছটায় থাকি। কেউ কথা বলে না আমার সঙ্গে। সবাই ভয় পায়। রাফির মন খারাপ হয়ে গেল। তুমি যদি কাউকে ভয় না দেখাও, তাহলে ওরা তোমাকে ভয় পাবে কেন? মিষ্টি মুখ নিচু করে বলল, আমি তো কাউকে কিছু করি না। কিন্তু শাঁকচুন্নি, চোরাচুন্নিরা রাত হলে দৌড়াদৌড়ি করে। ওদের ভয়েই সবাই আমাকে ভুল বোঝে। সেদিনের পর থেকে রাফি প্রায়ই সন্ধ্যায় গিয়ে মিষ্টির সঙ্গে গল্প করত। ওরা একসঙ্গে গাছের ডালে বসে চাঁদ দেখত, গল্প বলত, আর হেসে উঠত।

একদিন রাফি ঠিক করল, গ্রামের সবাইকে জানাবে মিষ্টির কথা। সে স্কুলে গিয়ে বলল, তেঁতুল গাছে ভূত আছে ঠিকই, কিন্তু সে আমাদের মতোই একজন, নাম মিষ্টি। সে একা থাকে আর কারো ক্ষতি করে না।

শুরুতে কেউ বিশ্বাস করল না, কিন্তু পরে রাফির সাহসে আর বন্ধুত্বে প্রভাবিত  হয়ে স্কুলের কয়েকজন বন্ধুরা তেঁতুল  গাছের নিচে গেল। তারা দেখল, গাছটা আসলেই রহস্যময়, কিন্তু ভয়ংকর নয়। কিন্তু রাফির ভূত বন্ধু ভীষণ রহস্যময়ী, বড় বড় চোখ, চ্যাও চ্যাও করে কথা বলে, অনেকটা ছায়ার মতো……। 

গ্রামঃ জগন্নাথদী পোঃ ব্যাসদী গাজনা 

উপজেলাঃ মধুখালী জেলাঃ ফরিদপুর 

Exit mobile version