Site icon গল্প

বুড়ো দাদুর যাদুকরী ছাতা 

মামুন সরকার

একটা ছোট্ট গ্রামে থাকতেন বুড়ো এক দাদু । দাদু ছিলেন খুব দয়ালু আর বুদ্ধিমান। তাঁর সবচেয়ে প্রিয় জিনিস ছিল একটা ছাতা। ছাতাটা তাঁর সঙ্গী হিসেবে সব সময় সাথে থাকে। ছাতাটা ছিল একটু পুরানো, লাল রঙের। শিশুদের হাসি আনন্দ তাঁর খুব প্রিয়। রাস্তা ঘাটে শিশুদের খেলতে দেখলে বুড়ো দাদু বলতেন, “এই ছাতাটা আমার যাদুকরী ছাতা।”

দাদুর কথায় শিশুদের মনে বেশ কৌতূহল জাগে। ছাতার মধ্যে আবার জাদু আছে? এক শিশু ফোকলা দাঁত বের করে বলে, তা দাদু, তোমার ছাতার মধ্যে কী জাদু আছে আমাদের একটু দেখাও না। 

দাদু একগাল হেসে বলেন, দেখাব, নিশ্চয়ই দেখাব।

এক শরতের বিকাল। হঠাৎ করে আকাশে মেঘ জমল। সূর্যকে ঢেকে মেঘের ছায়া পড়েছে খেলার মাঠে। বাতাসে সাদাকালো মেঘরাশি তুলোর মত উড়ছে। সবাই ভাবল, বৃষ্টি হবে। বুড়ো দাদু ছাতা নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মাঠে এলেন। উড়ন্ত মেঘ থেকে হালকা বৃষ্টি পড়তে শুরু করল।

দাদু একটা গাচের নিচে দাড়িয়ে ছাতা খুলে দিলেন।তখনই ঘটে গেল এক আশ্চর্য ঘটনা। আকাশ থেকে বৃষ্টি নয়, বরং ছাতার চারদিক থেকে রঙিন ফুলের পাপড়ি ঝরতে শুরু করল।

এমন আচানক ঘটনা দেখে গ্রামের ছোট ছোট শিশুরা হতবাক। সবাই দৌড়ে দাদুর ছাতার নিচে গেল। বৃষ্টির ফোঁটা নয়, সত্যি ফুলের পাপড়ি ঝরছে।

কিন্তু ছাতার একটু দূরে ঠিকই বৃষ্টি ঝরছে। শিশুদের মধ্যে একজন জানতে চাইল, আচ্ছা দাদু, তোমার ছাতার উপর কেন বৃষ্টি পড়ে না?

দাদু হেসে বললেন, আমার ছাতাটা জাদুকরী ছাতা। তাই ঝড়তুফানে এই ছাতাই বিপদ থেকে আমাকে বাঁচিয়ে রাখে। তোমরা সেদিন আমার ছাতার জাদু দেখতে চেয়েছিলে, তাই বৃষ্টি হবে দেখে ছুটে এলাম তোমাদের আনন্দ দিতে। কী,  আনন্দ লাগছে না?

সবাই দাঁত বের করে হাসল। বড় বড় চোখ দাদুর ছাতার দিকে। দাদু চড়কার মত ছাতা ঘুরান আর ছাতা থেকে বৃষ্টির ফোঁটার মত রঙবেরঙের ফুলের পাপড়ি ঝরে বাতাসে উড়ে যায়।

মজার ব্যাপার হলো, যখন দাদু ছাতাটাকে মাথার উপর থেকে সরিয়ে দিলেন, তখন ছাতার নিচ থেকে জলের ঝর্ণা বইতে লাগল। যেন ফুলের পাপড়িগুলো

জলস্রোতে রূপ নিল। এমন ঘটনা দেখে সবাই চুপ। ভাবতে পারছে না এমন অবিশ্বাস্য ঘটনা কেমন করে ঘটছে। আরো অবাক করা বিষয় হলো, দাদু তাঁর জুব্বার পকেট থেকে ছোট ছোট মিষ্টির প্যাকেট বের করে সবাইকে দিলেন। শরতের মেঘ মানে এই রোদ এই বৃষ্টি। মেঘ কেটে সূর্য হাসল। 

তবে ঘটনা যাই ঘটুক। শিশুদের সবার মুখে হাসি ফুটে উঠল কিন্তু শিশুরা বুড়ো দাদুর বুদ্ধিমত্তার কাছে হেরে গেল। কারণ ছাতার ভাঁজে ভাঁজে লুকানো ছিল নানান রঙের ফুলের পাপড়ি। দাদু যখন চড়কার মত ছাতাটা ঘুরিয়েছেন, তখন ছাতার ছিদ্র দিয়ে পাপড়িগুলো বৃষ্টির মত ঝরে পড়েছে। আর গাছের নিচে দাড়িয়েছেন বলে গাছের পাতা ভেদ করে প্রকৃতি বৃষ্টির ফোঁটা ছাতার উপর পড়েনি। যা ছোট ছোট অবুঝ শিশুরা ধরতে পারেনি। 

সব শিশুদের আনন্দ দিয়ে দাদু সবার কাছে প্রিয় হয়ে উঠলেন। সেই থেকে দাদুর ছাতাটা দশগ্রামের “জাদুকরী ছাতা” হিসাবে পরিচিতি লাভ করে। 

 *****

প্রয়োজনে 

হলি হোমস সাগর সৈকত 

অভিযান#১৫ ফ্ল্যাট নং এ /৭

টঙ্গী কলেজ গেট, গাজীপুর। 

Exit mobile version