Site icon গল্প

সায়েন্স ফিকশন গল্প : বিরিন্তা

ধ্রুব নীলের সায়েন্স ফিকশন গল্প —

বাংলা সন ১৪০১। পাঁচই ফাল্গুন। তৈয়ব আখন্দ বিব্রতকর অবস্থায় উঠোনে বসে আছে। হুরাসাগর নদীতে কী করে মরতে মরতে দশ কেজি সাইজের বোয়াল মাছ ধরেছে সেই গল্প শুনছিল হারু মাঝির কাছ থেকে। মাঝি চলে গেল। রেখে গেল নিরবতা।

তৈয়ব গেল মেয়ের পড়ার টেবিলের দিকে। পুরো বাড়িতে বাপ-মেয়ে ছাড়া আর কেউ নেই। মেয়েটাও শব্দ করে পড়ে না। সন্ধ্যা হতেই ঝপ করে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের নীরবতা নেমে আসে শোলাকুড়ি গ্রামের পুরনো বনেদি ধাঁচের টিনশেডের বাড়িটায়।

বাড়িটা তৈয়বের নয়। বাড়ির মালিক তার স্ত্রী আফরিন নাহার। ঝগড়া যতবার হতো, সে-ই চলে যেত রাগ করে। পাশের নরিল্লা গ্রামে বড় ভাইয়ের বাড়িতে গিয়ে উঠত।

‘বিচিত্র ব্যাপার। তোর মা আমাকে বের করে দিলেই পারে। দুনিয়ার সব অঙ্ক ডাইলভাত, সংসারের অঙ্ক মিলাইতে গেলে চক্কর লাগে। এখন তারে আবার তার বাড়িতে ডাইকা আনা লাগবে।’

‘বাবা, মিষ্টি কুমড়ার খোসার ভর্তা পারো?’

‘আমি সর্বংসহ। পারি না এমন কিছু আছে! ডিমের ঝোল করি, সঙ্গে ল্যাটকা খিচুড়ি।’

টেবিলে চোখ বন্ধ করে বসে আছে বিরিন্তা। বাবার কথায় ভুল আছে, আবার নেই। বাবা সব সহ্যও করে। তাই সর্বংসহ বলাটা ভুল হয়নি।

হারিকেনের আলোয় মাথাব্যথা কমেছে কিছুটা। এখন চলছে চিন্তাপড়া। নাইন-টেনের পড়া বহু আগেই শেষ। বাবার বইপত্র ভর্তি ট্রাংক। সেগুলো সব পড়া শেষ। শেষ বইটা বন্ধ করার পর বিরিন্তার মনে হয়েছিল, আইনস্টাইনের মতো এখন তার চিন্তাপড়া ছাড়া উপায় নেই। জানা জিনিস আবার কপচানোর কোনো মানে হয় না।

নিজে গণিতের শিক্ষক হয়েও মেয়ের বিচিত্র জ্ঞানচর্চা বুঝতে পারে না তৈয়ব। মেয়ে তার দুনিয়ার অঙ্ক-বিজ্ঞান সব মুখস্ত করে বসে আছে। তার জন্য বইপত্র কিনে আধাফকির দশা তৈয়বের।

‘আমাকে কোনো কাজে ডাকবে না বাবা। কড়া করে চা দাও। বিনিময়ে রাতে মাথা টিপে দেবো। গিভ অ্যান্ড টেক। একটা ফোটন নাও, একটা ফোটন দাও। তোমাদের জগতের নিয়ম।’

‘তোর তো বেনিয়মের জগত। চা খাইয়া রাইতের তিনটায় ঘুম। আইজ কী পড়া চলতাসে মাথায়?’

‘আজ পড়ছি না বাবা। ক্রিকিয়নের নতুন মাত্রা দেব। ওটা নিয়ে একটা মজার কাজ করলে কেমন হয়। যেমন ধরো…ভর-শক্তি, কোয়ান্টাম ফিল্ড এসব কিছুই থাকলো না। রইল কেবল একটা নাই কণা। নাহ। যেটা নাই, সেটাকে কণা বলা ভুল। নাই মানে নাই।

‘হাতিঘোড়া ঘোড়াহাতি রগড়বগড়। এদিক যা ওদিকও তা।’

‘নাহ বাবা, প্যারিটিতে সামান্য এদিক ওদিক না হলে এখানকার মহাবিশ্বটাই টিকতো না। আমার চিন্তার যে মহাবিশ্ব, সেখানে আরও বড় গণ্ডগোল লাগিয়ে দিয়ে দেখবো। নাই থেকেই আবার সব কিছু… নাহ। থাক, তুমি বুঝবে না।’

‘অক্সফোর্ড হার্ভার্ডে পড়ার সুযোগ পাইয়াও যাই নাই। কোলাৎজ কনজেকচার সলভ করে বইসা আছি শোলাকুড়ি গ্রামে। কাউরে কই নাই। তোর এমন কি বিজ্ঞান আছে যে আমি বুঝুম না!’

‘তোমার অঙ্ক আছে মোটে দুটো। শূন্য আর এক। এর বাইরে কিছু নাই বাবা।’

বিরিন্তা চোখ খুলল। বাবার দিকে তাকিয়ে হাসলো। চমকে উঠল তৈয়ব। মেয়েটা অবিকল দাদির চেহারা পেয়েছে। তৈয়বের মনে হলো তার মা-ই যেন হাসি দিয়ে নিরবে বলছেন বেশি বোঝার চেষ্টা করলে তোমার মাথাটা যাবে বাবা। তুমি ত্রিমাত্রিক জগতের প্রাণী। তুমি তোমার স্পেস-টাইম আর বারোটা পার্টিকেল নিয়েই থাকো। আমার অন্য কাজ।

তৈয়ব আখন্দ উঠে দাঁড়াল। ফাগুনের চিনচিনে ঠান্ডা বাতাস। এমন বাতাসে বিষণ্নতার গুঁড়া মেশানো থাকে। তৈয়বের মনে হলো সে বেশিদিন বাঁচবেন না। আফরিন নাহারের পুরনো এ কাঠের বাড়ির প্রতি মায়া জন্মে গেছে। তাই, মৃত্যুর কথা ভাবলেই বুক চিনচিন করে। বাড়িটারও যেন প্রাণ আছে।

‘বাবা, জলদি রান্না করো। খিদে বেড়ে গেলে আবার উল্টোপাল্টা বলা শুরু করবো।’

তৈয়ব আখন্দ ব্যস্ত হওয়ার অজুহাত পেল। বাইরের খুপড়ি ঘরে রান্নাঘর। রওনা দিল সেদিকে। বিরিন্তা আবার চোখ বুঁজে ভাবনার জগতে ডুব দিয়েছে। তৈয়ব বের হওয়ার আগেই চেয়ারে হেলান দিয়ে বলল, ‘মা তো নেই। আমিও আর বেশিদিন নেই। এই জগত খুব বোরিং। শুধু তোমার খিচুড়ির লোভে আছি।’

তৈয়ব উত্তর দিল না। আফরিন নাহার রাগ করে গেছে। আবার ফিরে আসবে। কিশোরী মেয়ের এসব উল্টোপাল্টা কথায় আগে ঘাবড়ে যেত। এখন পাত্তাই দেয় না।

দরজা খুলতেই চমকে গেল তৈয়ব। কেউ একজন চট করে সরে গেল। রান্নাঘরে বাতি জ¦লছে। কেউ দাঁড়িয়ে থাকলে তাতে ছায়া পড়ার কথা। ছায়া পড়েনি।

হাতঘড়ির ব্যাটারি নষ্ট। পেছনের বাড়ির মিরাজের বাবার রেডিওটা আজ চুপ। কতক্ষণ ঠায় দাঁড়িয়ে রইল জানে না তৈয়ব। কয়েক মিনিট, নাকি এক ঘণ্টা? এসব ঘণ্টা মিনিটের মানে কী?

‘কে! কে ওইখানে!’

একটা অবয়ব। বৃত্ত, গোলগাল? বৃত্তের ভেতর আবার বৃত্ত। এ আবার কেমন আকৃতি।

অবয়বের সঙ্গে অদ্ভুত একটা ব্যাপার ঘটছে। নিজের এতদিনকার চেনা বাস্তবতায় একটা বড় ঢেউ এসে আছড়ে পড়লো তৈয়বের। ফিরে পেয়েছে সময়জ্ঞানও।

উঠোনের পাশ ঘেঁষে থাকা পেঁপে গাছটা অদ্ভুতভাবে গোল হয়ে আছে। আস্ত গাছটা হয়ে গেছে থ্যাবড়ানো গোলক। নিচের মাটিও শূন্যে উঠে দলা পাকিয়েছে। মাটি আর গাছ মিলে একটা চাদরের মতো দলা পাকানো হয়েছে যেন। অবয়বের সঙ্গ সেই পাকানো দলাটাও নড়ছে।

খানিক পর গাছটা আবার টুপ করে আগের মতো সটান দাঁড়িয়ে গেল। এবার দলা পাকালো পূর্বদিকের নারকেল গাছটা। অবয়বটা যেদিকেই যাচ্ছে, সেদিকেই সব দলা পাকিয়ে যাচ্ছে।

এই সব বাড়িঘর, গাছ আর মাটি যেন একটা অদৃশ্য চাদর। অবয়বটা যেখানেই যাচ্ছে, বাস্তবতার চাদরটাকে মুচড়ে যাচ্ছে। অবয়বটা সরে যেতেই আবার সব স্বাভাবিক।

‘কে! কথা কন না ক্যান। কী চাই! জিনিসপত্র নিয়া কী ভোজবাজি শুরু করসেন।’

‘এক্সকিউজ মি মিস্টার।’ এরপর হাল্কা কাশির মতো শব্দ। আর কিছু শোনা গেল না।

অবয়বটা চলে গেছে। সব ঠিকঠাক। গাছগুলো সব সোজা। মাটি আছে মাটির জায়গায়। তবু তৈয়বের মনে হলো, কিছুই ঠিকঠাক নেই। দুই পা এগিয়ে পেঁপে গাছটায় হাত বোলালেন। প্রকৃতির চেনা চাদরটাকে আবার টানটান করে দিতে চাইলেন যেন।

সায়েন্স ফিকশন গল্প : বিরিন্তা

‘তুমি এসেছো?’

এমনভাবে বললো বিরিন্তা, যেন সে শোলাকুড়ি গ্রামে ভিনজগতের কারও দেখা পাওয়ার জন্যই বসে ছিল।

‘আমি আছি। আমি এসেছিলাম। আমি আসবো।’

‘কোথায়?’

‘জানি না।’

‘ও। এখন কী চাও?’

‘এখন… শব্দটা গোলমেলে লাগে।’

‘তুমি কি বাবাকে ভয় দেখিয়েছো একটু আগে? কে কে করতে শুনলাম মাত্র।’

‘একটু আগে মানে কী?’

‘তুমি দেখি গাধার গাধা।’

‘তুমি এই মহাবিশ্বের একতা সূত্র বের করেছো। প্যারিটি ভায়োলেশন থেকে স্পেস-টাইম তৈরি করার সূত্র… তোমাকে নিয়ে যাব আমি। তোমাকে যেতে হবে। তুমি গিয়েছিলে।’

‘আমি গেলে বাবা একা হয়ে যাবে। আমার মা নেই। অনেক আগে মারা গেছে।’

‘তোমার কথা আমি বুঝতে পারি না। তুমি কি আমার কথা বুঝতে পারো?’

‘তোমাদের মহাবিশ্বে সময় বলে কিছু নেই? অবশ্য এখন তুমি সময়ের মাঝেই আছো। তাও বুঝতে পারছো না?’

‘একটু অদ্ভুত লাগছে।’

‘গুড। অদ্ভুত বিষয়বস্তু ছাড়া মহাজগতের মজা নেই। তুমি এখন সময়ের চক্করে পড়ে গেছো তাই না? কারণ তোমরা যদি বর্তমান অতীত ভবিষ্যতে একসঙ্গে থাকতে পারো, তাহলে এতক্ষণে আমার ভবিষ্যত সত্ত্বার সঙ্গে তোমার দেখা হয়ে গেছে কিংবা আরও আগেই আমাকে নিয়ে যেতে পারতে তোমাদের বিশ্বে।’

‘তুমি আমার সঙ্গে চলো। এখানকার চতুর্থ মাত্রাটা কেমন যেন। গা গোলায়।’

‘তোমার তো গা-ই নেই। তুমি একটা…। জানি না অবশ্য। তুমি কি খিচুড়ি খাবে?’

‘তুমি যা দেখছো তা আমার ত্রিমাত্রিক প্রজেকশন। আমি এবং আমরা… আমাদের অস্তিত্ব এখানে নেই। আমরা অশূন্য জগতের বাসিন্দা।’

‘না, আমি দেখছি, সেটা আমার চিন্তাপড়ার একটা ভ্রম। তোমার অস্তিত্বই নেই। তুমি আমার কল্পনা।’

‘হতে পারে। তুমিও কারও কল্পনা।’

‘হতে পারে। হতে পারে আর হতে পারের কাটাকাটি। এবার ভাগো।’

‘আমার সঙ্গে চলো।’

‘আমি যেতে চাই তোমাদের জগতে। তবে আজ না। বুড়ো হলে তারপর যাব।’

‘আমাদের মহাবিশ্বের বিপদ। মুশকিল আসান করতে হবে। তুমি ছাড়া গতি নাই।’

হাসল বিরিন্তা। কিছুটা সন্দেহ হচ্ছে, তার সত্যিই মাথা খারাপ হয়নি তো? নাকি সত্যিই এলিয়েন এসেছে তার কাছ থেকে শলাপরামর্শ নিতে। একটা গোল বলের মতো গুটিসুটি মেরে টেবিলের ওপর বসে আছে। এই মহাবিশ্বের সময় মাত্রা নিয়ে বিশেষ সুবিধা করতে পারছে না।

পারার মধ্যে যা পেরেছে তা হলো স্পেসটা বাঁকিয়ে দিতে পেরেছে। বিরিন্তার কলমটাকে দেখাচ্ছে একটা বড় চাকতির মতো। বিরিন্তা জানে, কলমটা কলমের মতোই আছে। স্পেস বেঁকেছে বলেই এমন দেখাচ্ছে। এলিয়েনটার কাছে স্পেসের মতো সময়টাও কি এমন দলা পাকিয়ে আছে?

‘আর কাউকে পেলে না?’

‘তোমার ট্রাঙ্কের ভেতর কী আছে তা আমরা জানি। তুমি পারবে। তুমি পেরেছো, তুমি পেরেছি…। না.. উফফ.. সময়.. জঘন্য একটা ব্যাপার।’

‘বিপদটা কী?’

কথা এড়িয়ে গেল বিরিন্তা। সময় নিয়ে লেকচার দিতে ইচ্ছে হলো না। শুনতেও ভালো লাগছে না। তবে তার ট্রাঙ্কে আস্ত একটা গ্যালাক্সি সুপারক্লাস্টার আছে। ওটা ক্রমাগত ছড়িয়ে পড়ছে, আবার একই সঙ্গে ভেতরের স্পেসটাও ছোট হচ্ছে। যে কারণে গ্যালাক্সিগুলো ট্রাঙ্ক ছাড়িয়ে বের হতে পারছে না। ঠিক এই মহাবিশ্বটার মতোই? এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিরাট গণ্ডগোল বেঁধে যাবে। পৃথিবীর বিজ্ঞানের বইটই সব বাতিল হয়ে যাবে। তারচেয়ে এলিয়েনের সমস্যা শোনা যাক। টুকটাক বাংলা শিখে আসায় কথাবার্তা চালানো যাচ্ছে, এটাই বা কম কী।

সায়েন্স ফিকশন গল্প : বিরিন্তা

‘আমাদের তিন ধ্রুবকে গণ্ডগোল লেগেছে। ওগুলো বদলে যাচ্ছে।’

‘ফাইন স্ট্রাকচার কনস্ট্যান্ট?’

‘হুম। আমরা পরম শূন্য হয়ে যাচ্ছি। আমাদের মহাবিশ্ব চুপসে যাচ্ছে। সময় বেশি নেই বিরিন্তা। না না আমি ভূত নই। ভূত সম্পর্কে আমার জ্ঞান সীমিত। মাফ করবেন।’

‘কীসের ভূত? ভূত এলো কোথা থেকে! আচ্ছা বাদ দাও, আমার কাজ কী এখন? তোমাদের মহাবিশ্বটাকে ফুলিয়ে দেবো?’

‘আমাদের মাস্টার নেটওয়ার্ক.. আমাদের সত্ত্বা… খুব সহজ সমাধান আছে। আমরা জানি না। তোমাকে ধন্যবাদ। আমাদের একটি নতুন ডাইমেনশনের অস্তিত্ব দরকার..। তোমার ট্রাঙ্কে আমরা দেখেছি। ছোট্ট একটা গোলক। তার ভেতর মহাবিশ্ব। সেটা আবার ফুলছে। বিরিন্তা আমি এখন জানি অপেক্ষা মানে কী। তবে আমি তা করবো না। তুমি চলো।’

‘তোমরা অপেক্ষা করতে জানো?’

‘সময়টা বার বার ফসকে যাচ্ছে। কেমন যেন ক্ষণে ক্ষণে সব বদলে যাচ্ছে। শূন্য সময়ের ব্যবধানে।’

‘আমার ট্রাঙ্কে থাকা গ্যালাক্সিটা ক্রিকিয়নের তৈরি। ফলস ভ্যাকুম ডিকে নয়। আমারটা কোয়ান্টাম পার্টিকেল অব থটস। তবে আমাদের এই স্পেসটাইম ফেব্রিকে এটা শূন্য সময়ের জন্য থাকে। একটা শূন্য ধারা বলতে পারো। চিন্তাকণার কোয়ান্টাইজড হওয়ার সুযোগ নেই। ওটা দিয়ে তোমাদের কাজ হবে?’

‘আমি গেলাম। আমি ভূত না।’

‘কীসের ভূত!’

‘আমি দুঃখিত। সময়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছি বিরিন্তা। এক্সকিউজ মি মিস্টার।’

এরপর কাশির মতো শব্দ করলো। রাজ্যের খিদে নিয়ে বসে আছে বিরিন্তা। এলিয়েনটা না গেলে খেতেও পারছে না।

‘তোমার আবার কাশি হয়েছে নাকি।’

‘হয়েছে… হবে.. এসব আমি বুঝতে পারছি না। সময়টা মাপতে পারছি না। আমি একসঙ্গে.. স্পেস চাদরটা খুব অস্বস্তিকর। এর চেয়ে শূন্য জগত ভালো।’

‘একটু আগে বললে তোমাদের মহাবিশ্ব চুপসে যাচ্ছে। আবার বলছো শূন্য জগত ভালো।’

‘এখানে আসার পর আমার ইন্টারপ্রিটেশনে গোলমাল বেঁধে যাচ্ছে। বলতে পারো এর উল্টোটা। তোমাদের কাছে যেটা বিগ ব্যাং, সেটাই আমাদের কাছে মৃত্যু। চরম শূন্যের সমাপ্তি। আবার সেটাই অশূন্য।’

‘ওহ। তাহলে অপেক্ষা করো। আবার সব চুপসে আসবে। সময় হোক।’

‘সময়ের একক কী?’

‘বস্তু দিয়ে সময় মাপতে গেলে তো পারবে না ভাই। আমরাও বোকার মতো ঘড়ি দিয়ে সময় মাপতে চাই। অবশ্য দেখে মনে হচ্ছে তোমার ভর শূন্য। তুমি শব্দ তৈরি করছো কী করে? তরঙ্গ ছুড়ে দিচ্ছো আমার মগজ বরাবর?

‘তোমাকে আমি নিয়ে গিয়েছিলাম, না নিয়ে যাব… নিয়ে যাচ্ছি…। না না আমি ভূত নই।’

‘ভূতের কথা বলছো কেন বার বার। এত বেশি বললে শেষে দেখা যাবে চিন্তকণা হয়ে ভূত আর অ্যান্টিভূত তৈরি হয়ে যাবে।’

এলিয়েনটার মুখ নেই। থাকলে অসহায়ত্ব কিছুটা হলেও টের পেতো। বেচারা এই মহাবিশ্বের সময় নিয়ে আবারও গণ্ডগোলে পড়ে গেছে। উল্টোপাল্টা বকছে। বিরিন্তা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল।

বিরিন্তা বলল, ‘তোমাদের জগতে সময় ব্যাপারটা নেই। তাই তুমি এখন যাও। আমি যখন একদম বুড়িয়ে যাব, তখন এসো। ততদিনে আমিও একা হয়ে যাব। এ জগতে আর কাজকর্ম থাকবে না। সময় অতিবাহিত হওয়ার ব্যাপারটাও তুমি বুঝতে পারবে না।’

‘চারদিকে এত এত কম্পন। প্যাকেটের মতো ভেসে বেড়াচ্ছে। আমি দম নিতে পারছি না বিরিন্তা। বিরিন্তা মানে কী?’

‘তুমি যা টের পাচ্ছো, সেগুলো নিউট্রিনো। তোমার মতো, তবে অশূন্য নয়। আর যা দেখছো, সব আমাদের সবেধন ফোটন মণি। এ জগতের ভ্রম। একগাদা অদ্ভুতুড়ে জিনিসের মাঝে আমাদের বাস।’

‘ভ্রম কী?’

‘লেকচার দেওয়ার সময় নেই। যেকোনো সময় বাবা খিচুড়ি নিয়ে আসবে। তুমি ভাগো। পরে ভেবে দেখবো।’

‘আমি এসেছিলাম, আমি এসেছি, আমি আসবো, আমি আবার এসেছিলাম..। ধন্যবাদ আপনাকে মহান বিরিন্তা। আপনার সূত্রে তৈরি করা প্যারিটি ইঞ্জিনের কারণে আমরা ফিরে পেয়েছি আমাদের… শূন্যতাই আমাদের স্পেসটাইম।’

পুরোপুরি খেই হারিয়ে ফেলল স্পেস বাঁকিয়ে দেওয়া গোল অবয়বটার। এরপর বিরিন্তার টেবিল থেকে ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল।

‘মহান বিরিন্তা!’ বলে নিজেই হাসতে লাগলো। 

‘খিচুড়ির লগে পোড়া মরিচ ল। অমৃত। এক্কেবারে ফিবোনাচ্চি রাশিমালার লগে গোল্ডেন রেশিওর মাখনা।’

‘সস্তা তুলনা করবে না বাবা। মহাবিশ্বে আছেটা কী শুনি। পুরোটা একটা ফিল্ড। আর স্ট্রিংয়ের কাঁপাকাপি।’

‘ওই ফিল্ড না থাকল তো সব ফক্কারে মা। এই যেমন তোর মা রাগ কইরা গেল গা। সে থাকলে এখন মলা মাছের চচ্চড়িটা খাইতে পারতাম। আইচ্ছ, মানুষ মারা গেলে কি সে অন্য জগতে যায় রে মা?’

‘কোয়ান্টাম ফিল্ড হিসেবে থাকতে পারে… না থাক এসব বলতে ইচ্ছে করছে না। আলু আর মাছ পুড়িয়ে যে ভর্তাটা করতে ওটা খেতে ইচ্ছে করছে।’

বাংলা সন ১৩৯১। বৈশাখের ২০ তারিখ।

রেডিওতে ঝড়ের পূর্বাভাস। ঝড়ো হাওয়ার ছিটেফোঁটাও নেই। ঝিরঝিরে বাতাস আছে। তাতে বৃষ্টির গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে না।

‘বুঝলা আফরিন বেগম। দুনিয়াটাও একটা ভাবে চলে। বৃষ্টির ভিতরে যে গন্ধ আছে সেটা তৈরি হয় মাটিতে। সেটা মানুষের ভালো লাগে। সেই ভালো লাগা ধুইয়া আমরা কবিতা লিখি, কাহিনি লিখি।’

‘তুমি তো লেখো না। খালি বিজবিজ কইরা অঙ্ক করো।’

‘এসব অঙ্কের পেপার ছাপা হয়, টেকাটুকা কিছু পাই। মন্দ কী। নিজের তো বাড়িঘর নাই। আছে খালি অঙ্ক।’

‘মাইয়াডাও হইসে বাপের মতো। আধা পাগল। একটা জিনিসের নাই ঠিক।’

মায়ের পাশে চুলায় রান্না দেখছে বিরিন্তা। তৈয়ব উঠানে পায়চারি করছে। বাবাকে বড় বড় চোখ করে বলল, ‘বাবা বিরিন্তা কী?’

‘তুই হওয়ার পর সবাই আমারে জিগায় নাম কী রাখবা কইন্যার। আমি ভাইবা কুল পাই না। শেষে বিরিন্তা ফুলের নামে দিলাম নাম। পরে জগত বিচরাইয়া দেখলাম, এই নামে কোনো ফুল নাই। তবে এখন আছে। আমার ঘরেই আছে।’

‘বাবা জিনিস কী? বাবা আকাশে তারা ছাড়া আর কিছু নাই?’

বিরিন্তার প্রশ্ন তৈয়বের কানে যায় না। সে সিগারেট খাওয়ার জন্য উঠোন ছেড়ে যায়। মেয়ে তার এই বয়সেই বিরাট দার্শনিক হয়ে গেছে। জিনিস জিনিসটা যে কী, সেটা বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীরাও জানে না। 

বিরিন্তাকে একটা পিঁড়িয়ে বসিয়ে আফরিন নাহার উঠল।

‘বিরিন্তা তুই এখানে বস। আমি সুরভীদের ঘর থেকে দুইটা পেঁয়াজ নিয়া আসি।’

‘মা তুমি কি মইরা যাইবা?’

মেয়ের বিচিত্র কথাবার্তায় অভ্যস্ত আফরিন ও তৈয়ব। এসব কথার তারা দেয় না সচরাচর।

মা চলে যাওয়ার পর অদ্ভুত দৃশ্যটা দেখলো বিরিন্তা। রান্নাঘরের মাটির মেঝেতে রাখা আলু আর বেগুন দলা পাকিয়ে গোল হয়ে আছে। উঠোনের মাটিও উঠে গেছে। বিরিন্তা হাত বাড়ালো। তার হাতটাও বেঁকে গোল হয়ে গেছে। বিরিন্তা ভয় পেলো।

‘ভূত! ভূত!’

‘না না আমি ভূত নই। ভূত সম্পর্কে আমার জ্ঞান সীমিত। মাফ করবেন।’

‘ও মা! ভূত!’

দৌড়ে আসে আফরিন নাহার। মেয়েকে কোলে নিয়ে বসে থাকে। মেয়ের কথাটা এখনও কানে বাজছে। আফরিন জানে সে মারা যাবে। শরীরে মরণব্যাধী। মেয়েটা আগেভাগে আঁচ করতে পারে। কীভাবে পারে কে জানে।

বিরিন্তার ভয় কেটে যায়। রান্নাঘর ছেড়ে চলে যায় বড় ঘরে। ঝড় আসবে একটু পর। বজ্রপাত হবে অনেক। এ সময় বাবার কোলে বসে গল্প শোনার ইচ্ছে হয় তার। গোলগাল ভূতটার জন্য মন খারাপ হয়েছে। আবার এলে তার সঙ্গেই গল্প করা যেত।

‘বিরিন্তা। তুমি চলো আমার সঙ্গে। আমি তোমাকে নিতে এসেছি, নিতে আসবো, নিয়ে গেছি।’

‘তুমি কোন ভূত? নাই ভূত? নাকি আছে ভূত?’

এরপর আরও অনেক কথা বললো গোলগাল অবয়বটা। একটা কথাও বুঝল না বিরিন্তা।

‘আমি গেলাম। আমি ভূত না।’

‘তুমি তাহলে কী? টুথ?’

‘তোমাকে আমি নিয়ে গিয়েছিলাম, না নিয়ে যাব… নিয়ে যাচ্ছি…। আর.. না, না আমি ভূত নই।’

‘তুমি তো এই কথা আগেও বলেছো?’

‘আগে? সেটা আবার কী?’

বিরিন্তার মনে হলো সে এই কথা শোনেনি, ভবিষ্যতে শুনবে। কারণ সে ভবিষ্যতের কথা জানতে পারে। কী করে জানে সেটা সে জানে না। বাবা বলেছে, এর জন্য তাকে আগে অনেক পড়তে হবে।

‘গোল ভূত, তুমি আছো? আমার বেলুনটা দেখেছো? ওটা আমার চিন্তাবেলুন।’

‘তুমি আমাদের জগতকে মহাসম্প্রসারণের হাত থেকে বাঁচানোর সূত্রটা দিতে পারো। আমরা অশূন্য জগতের বাসিন্দা। শূন্যতাই আমাদের স্পেস-টাইম। এর বেশি কিছু জানি না।’

বিরিন্তা হা করে শুনলো। কিছু বলল না। গোলগাল অবয়বটা ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল।

খাটের নিচে দুটো ট্রাঙ্ক। একটার ভেতর বিজ্ঞানের বইপত্র। বিরিন্তা কিছুদিন আগে সবে পড়তে শিখেছে।

পাশের ঝুল পড়া আরেকটা ট্রাঙ্ক। ওটার ডালা খুলল বিরিন্তা। গোল একটা কাচের বাক্স রাখা। ভেতরে ছোট ছোট প্যাঁচানো অনেকগুলো জিনিস। শূন্যে ভাসছে। মনে হলো একটা বেলুন। বিরিন্তা বেলুন ভালোবাসে। বাক্সের ভেতর একটা বেলুনটা ফুলছে তো ফুলছে। কিন্তু বাক্স ছেড়ে বের হতে পারছে না। কখনও পারবে না বের হতে। বেলুন যত ফুলছে তত ভেতরের সব কিছু ছোট হচ্ছে।

ঝপ করে ডালাটা বন্ধ করে দেয় বিরিন্তা। কাঁপতে থাকে থর থর করে।

ছুটে এল আফরিন নাহার। বিরিন্তাকে কোলে নিয়ে তৈয়বের খোঁজে হাঁটা দিল। তৈয়ব তাকে নিয়ে হুরাসাগরের পাড়ে ঘুরে এলেই আবার শান্ত হবে মেয়েটা।

সন ১৪৮১। শীতকাল।

‘ম্যাডাম আপনার স্পিচ রেডি।’

‘স্পিচ? হুম। যেতেই হবে?’

‘কমিটি থেকে বেশ কবার ফোন এসেছিল। এটাই শেষ। আর নাকি কাউকে নোবেল দেওয়া হবে না। আপনার পর আর কাউকে আসলে সেভাবে…।’

হাসলেন বিজ্ঞানী বিরিন্তা। বিজ্ঞানের এমন এক ঘরের দরজা খুলে চাবি ভেঙে দিয়েছেন, কেউ আর তাতে তালা দিতে পারবে না। ফলস ভ্যাকুম ইঞ্জিন, ইচ্ছেমতো প্যারিটি ভায়োলেশন, সেই সঙ্গে সুপার সিমেট্রিক্যাল কলিশনের মাধ্যমে এমন এক কোয়ান্টাম জগত তৈরির নকশা, যেখানে চাইলে সময়কে বাগে আনা সময়েরই ব্যাপার মাত্র। হয়তো সেটা এতক্ষণে ভবিষ্যতের কোনো টাইমলাইনে হয়েও গেছে।

‘রিরিন, তুমি বরং আমার ক্রাফটটা রেডি করো। আমি শোলাকুড়ি গ্রামে যাব।’

‘গ্রামের সেই বাড়ি তো এখন জঙ্গল বিরিন্তা। ইনফ্যাক্ট, কেউই থাকে না। সবাই টিএ নেবুলার এএন-২ গ্রহে। আমরাও চলে যাই, আপনার কী মত?’

‘আমাকে যেতে হবে। এক অতিথি আসবে। পাগলাটে গোলগাল অতিথি।’

‘কোন গ্যালাক্সির?’

‘এই মহাবিশ্বের না। সে কোনো মহাবিশ্বেরই না। তবু সে আসবে। আমার সাহায্য দরকার তার।’

‘সে কি আগেও এসেছিল?’

বিরিন্তা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, ‘নাহ।’

বিরিন্তার একের পর এক আবিষ্কারে বদলে গেছে চিরচেনা সমস্ত বিজ্ঞান। কোয়ান্টাম প্যারিটি ইঞ্জিন আবিষ্কারের পর এক লহমায় কেটে যায় জাগতিক সব সমস্যা। বিশ্বের সকল মানুষের মাঝে দেখা দেয় এক অদ্ভুত হাহাকার। বেঁচে থাকার মানে খুঁজতে মরিয়া হয়ে ওঠে সবাই। অন্য বিজ্ঞানীরাও মেতে ওঠেন স্পেসকে জয় করার নেশায়। একসময় হাতের মুঠোয় আসে সেটাও। সেই থেকে খাঁ খাঁ করছে দুনিয়াটা। মানুষ নাকি টিএ নেবুলায় স্বর্গ খুঁজে পেয়েছে। বিরিন্তার আক্ষেপ নেই। উল্টো তার খুশিই হওয়ার কথা। আস্ত একটা নেবুলা আর নীল-লাল-কমলা রঙে ভরপুর একটা অতিকায় গ্রহের নাম রাখা হয়েছে তার মা-বাবার নামে। মহাবিশ্বের কোনো সমস্যাই এখন আর সমস্যা নয়। নতুন সমস্যা দেখা দিলেও এআই সিমুলেটর সেটার সমাধান বের করে দিচ্ছে এক তুড়িতে।

মাঝের কোনো এক রাতের কথা।

শোলাকুড়ি গ্রামটা আগের মতোই আছে। মানুষজন নেই। পুরো গ্রামটাই এখন গাছপালা আর বনজঙ্গলে ভরা।

বাড়ি আর ট্রাঙ্কটা আগের মতোই আছে। বিরিন্তা ওটার গায়ে হাত বোলালেন। খুলে দেখতে ইচ্ছে করলো না। গ্যালাক্সি সুপারক্লাস্টারটা সে হয়তো আরও পরের কোনো এক সময়ে তৈরি করেছে। বা তার পরবর্তী প্রজন্মের কেউ তৈরি করে থাকতে পারে। যারা হবে আরও উন্নত বুদ্ধিমত্তার মানুষ। তাদের কাছে সময় নেহায়েত একটা মাত্রা ছাড়া কিছুই নয়। যে মাত্রাটাকে চাইলেই দুমড়ে মুচড়ে যখনতখন যেকোনও কিছু ঘটানো যায়।

প্রায় একশ বছর ছুঁই ছুঁই বৃদ্ধা বিরিন্তার সামনে গোলগাল সেই অশূন্য জগতের বাসিন্দা। বিরিন্তা ঠিক ঠিক জানে ওটা কী বলবে।

‘তুমি কি অশূন্য জগতের ভূত?’

‘না না আমি ভূত নই। ভূত সম্পর্কে আমার জ্ঞান সীমিত। মাফ করবেন।’

‘ওহ হ্যাঁ। একবার বলেছিলে। মনে পড়েছে।’

‘হয়েছে… হবে.. এসব আমি বুঝতে পারছি না। সময়টা মাপতে পারছি না। আমি একসঙ্গে.. স্পেস চাদরটা খুব অস্বস্তিকর। এর চেয়ে শূন্য জগত ভালো।’

‘হুম। তোমার সমাধান তো হলো। এবার কি বিদায় নেবে? নাকি আমাকে নিয়ে যাবে তোমাদের জগতে বেড়াতে?’

কেটে গেল কয়েক মুহূর্ত।

‘বিরিন্তা মানে কী?’

‘বিরিন্তা একটি ফুলের নাম। আগে বলা হয়নি তোমাকে কথাটা। আর এই নাও তোমার জগতের সমাধান। ছোট্ট একটা প্যারিটি ভায়োলেশন ঘটলেই সব আগের মতো হয়ে যাবে।’

‘ধন্যবাদ আপনাকে মহান বিরিন্তা। আপনার সূত্রে তৈরি করা প্যারিটি ইঞ্জিনের কারণে আমরা ফিরে পেয়েছি আমাদের..।’

বিরিন্তা হাত বাড়িয়ে গোলগাল অবয়বে হাত রাখলেন। যথারীতি বাঁকানো স্পেসে হাতটাও বেঁকে গেল অদ্ভুতভাবে।

‘বিদায় বন্ধু।’

ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল গোলগাল অবয়ব। ঠিক আগের মতোই।

বৃদ্ধা আকাশে তাকালেন অনন্ত এই নক্ষত্রপুঞ্জ ঠিক অনন্ত নয় তার কাছে। ঠিক সেই কাচের বাক্সের মতোই। অসীম, অথচ এক। ওপারে কি আরেক বিরিন্তা ডালা খুলে তাকিয়ে আছে তার দিকে?

পকেট থেকে ছোট্ট সুইচারটা বের করলেন বৃদ্ধা। কোয়ান্টাম বাবল ইনফরমেশন স্ট্যাবিলাইজার ওটা। এমন এক জগতে প্রবেশ করবে বিরিন্তা যেখানে ওয়েভ ফাংশন ধ্বংস হয় না। তারপর ফেলে আসা অতীতের দরজাটা খুলতেই সেখানে ঝাঁপ দেবে তার একান্ত নিজের কোয়ান্টাম ইনফরমেশন। চেপে দিল বাটন। লুটিয়ে পড়লেন বিরিন্তা।

ঝপ করে ডালাটা আবার লাগিয়ে দিল বিরিন্তা। থরথর করে কাঁপছে সে। তবে ভয় পাচ্ছে না। কারণ সে জানে এখুনি তার মা আসবে। এরপর বাবার কোলে চড়ে যাবে নদীর তীরে।

সায়েন্স ফিকশন গল্প : বিরিন্তা

লেখক ধ্রুব নীল

যোগাযোগ: 01976324725

dhrubonil@yahoo.com

Exit mobile version