Site icon গল্প

ভালোবাসার আবির

মৃদুলা বেশ ভালো কবিতা আবৃত্তি করে।
সে যখন কবিতা আবৃত্তি করে ,তখন যেন এক সুরের মূর্ছনা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
“উদীচী নাট্যদল” এর সহ-সংগঠন ” সুরের আলপনা ” যেখানে আবৃত্তি চর্চা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
মৃদুলা ” সুরের আলপনা ” থেকে আবৃত্তি প্রশিক্ষণ নেয়।তারপর কোনো না কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও মৃদুলা বেশ পরিচিত মুখ। সেই সুবাদে আবির নামে এক ব্যাক্তি মৃদুলাকে মেসেঞ্জারে নক দেয়।
মৃদুলা প্রথমে পাত্তা দেয় না।তারপর ঐ ব্যক্তি যখন আবেগীয় কিছু কবিতার লাইন লেখে ,তখন মৃদুলা একটু ঐ ব্যাক্তির সাথে কথা বলতে আগ্রহী হয়।

( রোমান্টিক গল্প ভালোবাসার আবির )


মৃদুলা লেখে ,” বাহ্ ,অনেক সুন্দর কবিতা লিখেন তো আপনি ।”
আবির বলে ,” এইতো ,একটু চেষ্টা করি আর কী ।
আপনার সাথে কথা বলে ভালো লাগছে।আপনার ব্যাপারে অনেক জানি। আপনিও অনেক ভালো কবিতা আবৃত্তি করেন।”
মৃদুলা বলে ,” তাই নাকি ,আমার আবৃত্তি আপনার ভালো লাগে ?”
আবির বলে ,” হুম, খুব ভালো লাগে।শুধু কী আমি সকলেই আপনার আবৃত্তি অনেক পছন্দ করে।”
মৃদুলা বলে ,” ও আচ্ছা ,তাই বুঝি।আচ্ছা ,আমি তো বকবক করেই যাচ্ছি।আপনার পরিচয় তো জানা হলো না।”
আবির বলে ” আমার নাম আবির হোসেন।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভিদ বিজ্ঞানে মাস্টার্স শেষ করেছি।এখন একটা চাকরির জন্য চেষ্টা করছি।তবে এখন ভাইয়ের একটা ব্যবসা দেখাশোনা করছি।”
মৃদুলা বলে ,” আরে বাহ্ ,দারুণ।”

বাংলা রোমান্টিক গল্প ভালোবাসার আবির

এভাবে মৃদুলা আর আবিরের কথাবার্তা চলতে থাকে।
একদিন আবির মৃদুলার সাথে দেখা করতে চাইলো।অনেকদিন হয়ে গেলো ।কেউ কাউকে সামনাসামনি দেখে নি।
মৃদুলা আবিরকে কল করে বললো ,” কোথায় অপেক্ষা করবো তোমার জন্য? “
আবির বললো ,” ঐ যে ধানমন্ডি লেকের পাশে অপেক্ষা করো।আমি আসছি।”
মৃদুলা আবিরের কথামতো ধানমন্ডি লেকের পাশে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে।
আবির কিছুক্ষণ পর ধানমন্ডি লেকে আসলে মৃদুলাকে কল দেয়।মৃদুলা কল ধরে বলে ,” তুমি লেকের কোনদিকে ? আমি লেকের পাশে একটা বেঞ্চিতে বসে আছি।”
আবির বলে ,” হুম, আমি তোমাকে দেখতে পেরেছি।”
আবির ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়।অনেকদিন পর মৃদুলা ও আবির পরষ্পরকে দেখে আনন্দে শিহরিত।
আবির বলে ,” মৃদুলা ,তোমাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে।”
মৃদুলা বলে ,”তাই ,অনেক ধন্যবাদ। তোমাকেও অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে আবির।”
আবির বলে ,” এতোদিন পর আমরা মিলিত হলাম। আমার অনেক ভালো লাগছে।”
আবির বলা শুরু করে ,” আমার জীবনের গল্প অনেক কঠিন আবরনে মোড়ানো।আমরা দুই ভাই বোন।বোনটা ইন্টারের পর পড়াশোনা করতে পারে নি।তাকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দেয় আমার মা-বাবা।আমি তখন ভার্সিটিতে ছিলাম। না হলে বোনের বিয়ে আটকাতে পারতাম। “
মৃদুলা বলে ,” আহা ,অনেক দুঃখজনক।
তোমার বোন লেখাপড়া এগিয়ে যেতে পারতো। “
আবির দুঃখের সাথে বলে যেতে থাকে ,” হুম। তারপর ,দুই বছরের মাথায় বোনটা গর্ভবতী হয়।
সাত মাসেই জয়িতা ( আমার বোন ) লিভার পেইন শুরু হলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়।অনেক ছুটাছুটি করতে হয়।ডাক্তার জয়িতাকে বাঁচাতে পারলেও বাচ্চাটিকে বাঁচাতে পারে নি।”
মৃদুলা দুঃখিত হয়ে বলে ,” আহা ,কতোটা দুঃখজনক। “
মৃদুলা চোখ নামিয়ে ফিসফিস করে বললো,
“কী নিষ্ঠুর! এটা খুব অমানবিক।”

বাংলা প্রেমের গল্প

আবিরের গলায় ক্ষীণ কষ্ট জমলো,
“এ কারণেই আমি মনে করি টাকা-পয়সা দেখে মানুষ নির্বাচন না করে মানুষের ব্যক্তিত্ব দেখে জীবনসঙ্গী নির্বাচন করা উচিত। কারণ বিয়ে ছেলেখেলা নয়, সারা জীবনের বন্ধন।”
আবির বলে ,” জানো ,জয়িতার জন্য অনেক কষ্ট হয়।কতোটা কষ্ট পেয়েছিলো বেচারী।যাই হোক দুঃখের কথা বলে তোমাকে কষ্ট দিয়ে দিলাম, না ? “
মৃদুলা বললো ,” না তো।বরং তোমার কথাগুলো বলে যদি মন কিছুটা হালকা হয় তাতে ক্ষতি কী ?”
মৃদুলা চোখের চশমাটা খুলে গ্লাস পরিষ্কার করে আবার চোখে লাগায়।খোলা চুলে মৃদুলাকে খুব প্রাণবন্ত লাগছিলো।
আবির মৃদুলাকে বলে ,” তোমার চোখটা বেশ সুন্দর। কিন্ত, এতো সুন্দর চোখটা চশমার অন্তরালে ঢেকে রাখো কেন ?”
মৃদুলা হেসে বলে ,” তাই।আসলে চোখে সমস্যা।দূরের জিনিস স্পষ্টভাবে দেখতে পারি না।তাই চশমা পড়তে হয়।”
আবির বলে ,” ও ,তাই।আমরাও চোখে সমস্যা।”
মৃদুলা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে ,” তোমারও চোখে সমস্যা! কী হয়েছে ?”

মৃদুলা কিছুক্ষণ নিরব থাকে। তারপর চশমা খুলে গ্লাস পরিষ্কার করে আবার চোখে লাগায়। খোলা চুলে তাকে প্রাণবন্ত লাগছিলো। আবির তাকিয়ে থাকে, মনে হয় বলতে চাইছে—কতটা ভঙ্গুর অথচ কতটা দৃঢ় এই মেয়েটি।

হঠাৎ আবির ধীরে ধীরে বললো,
“মৃদুলা… আমি আসলে বর্ণান্ধ। রঙ আমার চোখে ভিন্ন, অনেকটাই ফিকে।”

মৃদুলা থমকে গেলেও দ্রুতই শান্ত স্বরে উত্তর দিলো,
“তাতে কী হয়েছে? মানুষের কারও হাত নেই, কারও পা নেই, কেউ তো একেবারেই অন্ধ। তোমার সবকিছুই আছে—শুধু রঙ বোঝো না, এটাই বা তেমন কী?”

আবির নিচু গলায় বললো,
“আমি চাই না আমার এই সীমাবদ্ধতা তোমার জীবনে কোনো আঁচড় ফেলুক। তাই দূরে সরে যাওয়া হয়তো ভালো।”

মৃদুলা তার হাত ধরলো।
“ভালোবাসা রঙে নয়, আবির। আমার ভালোবাসা তোমার কথায়, তোমার হৃদয়ের উষ্ণতায়। তুমি যদি মনে করো আমি কষ্ট পাব, তবে ভুল করছো। বরং তোমার সঙ্গ ছাড়া আমি কষ্ট পাব।”

আবির চোখ নামিয়ে বললো,
“আমি ভীত… অকারণ ভীতি। আমি চাই না তুমি কখনও আঘাত পাও।”

মৃদুলা নরম কণ্ঠে উত্তর দিলো,
“তাহলে একটাই প্রতিশ্রুতি দাও—আমরা চেষ্টা করব। ধীরে ধীরে, ধীরস্থিরে। রঙ তো শুধু চোখে নয়, রঙ আছে শব্দে, স্পর্শে, স্মৃতির ভাঁজে। আর সেই স্মৃতিই একদিন আমাদের জীবনের কালো ক্যানভাসকে আলোয় রাঙিয়ে তুলবে।”

মৃদুলা বলে ,” আবির ,তোমার ভালোবাসার রঙ আমি মেখে নিয়েছি।এভাবে আমাকে দূরে ঠেলে দিও না ।”
আবির বলে ,” আমিও তোমাকে ভালোবাসি বলেই দূরে চলে যেতে চাইছি।আমি চাই না আমার কোনো কমতি তোমার উপর প্রভাব ফেলুক।”

মৃদুলার সাথে আবিরের আর কোনো যোগাযোগ হয় নি।
এভাবেই যেন এক রঙিন ভালোবাসা বেদনার কালো ক্যানভাসে রূপ নেয়।

-আকুয়া জুবিলী কোয়ার্টার, ময়মনসিংহ

Exit mobile version